জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ

জাতীয়

ভোরের দূত ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ন্যায়বিচার, সংস্কার এবং নতুন করে বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও সকল সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ সনদের ৮০ বছর পূর্তিতে অভিনন্দন জানান। জাতিসংঘের ঐতিহাসিক সাফল্যের প্রশংসা করে তিনি বহুপাক্ষিকতা আরও শক্তিশালী করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর বিশ্বমঞ্চে প্রতিফলিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

অধ্যাপক ইউনূস ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তরুণদের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি “জুলাই ঘোষণা”–র আলোকে চলমান সংস্কার, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, অবাধ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব শাসনব্যবস্থা গঠনের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক সনদে যোগদান, জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের সাথে সহযোগিতা এবং অতীতের লঙ্ঘন প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন এবং তাদের অবদান প্রবাসে ও স্বদেশে সমানভাবে মূল্যবান।

আসন্ন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি এবং রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে তিনি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা নারী ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, তরুণদের উদ্ভাবনী ভূমিকা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নতুন প্রযুক্তির ন্যায্য ভাগাভাগি, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার, অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধ, প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যায্য বণ্টন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর পুনরুজ্জীবনের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি “তিন শূন্য বিশ্ব”-এর দৃষ্টি তুলে ধরেন—
১. শূন্য কার্বন,
২. শূন্য ধন-সম্পদের অতিসংকেন্দ্রণ (দারিদ্র্য নিরসন),
৩. শূন্য বেকারত্ব।

ভাষণকালে সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *