ভোরের দূত ডেস্ক: যাত্রাবাড়ী থানার কুতুবখালী বউবাজার এলাকার একটি মেস থেকে উদ্ধার হলো রিপন নামের এক যুবকের লা*শ। কয়েকদিন আগে মৃ*ত্যুবরণ করার ফলে প্রচন্ড গরমে লাশটি ফুলে, পঁচে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়েছিলো। তালাবদ্ধ মেস থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের পর সবাই ধরে নিয়েছিল লোকটি হয়তো আত্মহত্যা করেছে, অথবা প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে মা*রা গেছেন।
রিপনের মা ও বোনও বললেন তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কি আর করা, পুলিশ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করলো এবং পোস্টমর্টেম শেষে মৃতদেহ তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করলো।
সময় গড়িয়ে প্রায় এক বছর পর ডাক্তারী রিপোর্ট এলো পুলিশের হাতে। রিপোর্টে লেখা— “এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, ভিকটিমককে গলা টি*পে শ্বা*সরোধ করে হ*ত্যা করা হয়েছে।”
এবার নড়েচড়ে বসলো পুলিশ। রিপনের বোনকে বিষয়টা জানালে তারা জানায় তার ভাই হ*ত্যা*কান্ডের বিচার চান। রিপনের বোন বাদী হয়ে অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে থানায় হ*ত্যা মামলা দায়ের করলেন। তদন্তের দায়িত্ব পড়লো আমার বন্ধু ও ব্যাচমেট চৌকষ ও নবীণ অফিসার এসআই বিলাল আল-আজাদের উপর।
এসআই বিলাল প্রথমেই খুঁজতে থাকলেন রিপনের রুমমেটদের। কিন্তু এক বছরে বাসায় ভাড়াটিয়া পাল্টে গেছে বহুবার। প্রতিবেশীরাও কিছু মনে করতে পারছে না। খুঁজতে খুঁজতে জানা গেলো রিপনের এক রুমমেট মোরসালিন নামের এক তরুণ পাশের গ্যারেজে কাজ করত। সেখান থেকে সূত্র মেলে তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলা। এতোবড় বরিশাল জেলায় মোরসালিন নামের কত মানুষ আছে তার হিসাব আছে?
তখন প্রযুক্তিও এতো আপডেট হয়নি। বিলাল প্রথমে খুঁজতে থাকে এমন একটি গ্যারেজ যেখানে মোরসালিন নামের কেউ কাজ করে। এমন কয়েকটা গ্যারেজ বের করে মোরসালিন নামের একজন পাওয়া গেলো যার বাড়ি বরিশাল জেলায়।
নামটা শুধু মোরসালিন বাড়ি বরিশাল এর বাইরে আর কিছু জানা নেই। সরাসরি গিয়ে তাকে খুঁজে পেলে সে হয়তো পালিয়ে যাবে তাই ভিন্ন কৌশল নিলেন এসআই বেলাল। গুলিস্তান থেকে তিন হাজার টাকার জুতা-স্যান্ডেল কিনে ফেরিওয়ালা সেজে রওনা হলেন বরিশালে।
চেহারায় আনলেন ব্যাপক পরিবর্তন। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত এসআই বিলালের কাঁধে পুরনো ব্যাগ ভর্তি জুতা নিয়ে বরিশালের পথে প্রান্তরে গ্রামে গঞ্জে ঘুরে হাঁক ডাকছেন— “এই কম দামে জুতা নেন, এই স্যান্ডেল নেন!”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে ছয়জন ‘মোরসালিন’- কে খুজে পেলেন। কয়েকদিন ধরে কখনো জুতা, কখনো খেলনা বিক্রি করতে করতে সবার বাড়ি চষে ফেললেন। এক সময় যার খুঁজে নাম খুজে পেলেন পেলেন কিন্তু তার বাড়িতে তালা ঝুলছে। অবশেষে জানা গেল একজন ব্যক্তি মোরসালিনকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন।
গভীর রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হলো, কিন্তু তদন্তে দেখা গেল সে অরিজিনাল মোরসালিন নয়।
প্রথম টার্গেট মিস হলেও হাল ছাড়েনি এসআই বিলাল আল আজাদ। নতুন কিছু ক্লু পাওয়ায় তদন্তে নতুন মোড় নিলো।
রাত তখন সাড়ে তিনটা। এক সম্ভ্রান্ত বাড়ির চারদিকে উঁচু দেয়াল, গেটে অ্যালার্ম সিস্টেম, মালিকের কাছে বৈধ আ*গ্নে*য়া*স্ত্র সেই বাড়িতেই কাজ করছে মোনসালিন! পরিস্থিতি কঠিন ভয়ানক, আভিযানিক টীমের গা শিরশির করছে, পায়ের নিচে শুকনো পাতা পড়লেও যেন শব্দ না হয় সেভাবে পা টিপে টিপে চলছে সবাই। সবাই সতর্ক পজিশন।।
কলিং বেল দিলে আসামি পালাতে পারে। তাই এসআই বিলাল ও তার আভিযানিক দল সরাসরি দেয়াল টপকে ঢুকে পড়লেন বাড়ির ভেতর। সেখানে দেখা গেলো মোরসালিন রাত জেগে প্লাস্টারের কাজ করছে সেখান থেকেই চিলের মত ছোঁ দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে দ্রুত থানায় নিয়ে আসা হয়।
রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন জানাল— সে রিপনের রুমমেট ছিল। বাসা ভাড়া পরিশোধ না করায় একদিন রিপন তাকে বাসা ছাড়তে বলে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। তখন সে রিপনের গলা টিপে ধরে। রিপন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর আর জেগে ওঠেনি। মৃ*ত্যু*র পর মোরসালিন বাইরে থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে আইনের আওতায় এনেছে।
এসআই বিলাল আল-আজাদ বলেন—
“রিপন হত্যার রহস্য ভেদ করা আমার কাছে ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। অনেক বাঁধা-বিপত্তি আসলেও ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাইনি। মনে শুধু একটাই ছিল আমাকে অবশ্যই সফল হতে হবে।”
এই মামলায় কোনো সাক্ষী ছিল না, কোনো ক্লুও ছিল না। এক বছর পর ডাক্তারি রিপোর্ট এলে শুরু হয় প্রকৃত তদন্ত। ছদ্মবেশে বরিশালে গিয়ে দিনের পর দিন ফেরিওয়ালা সেজে ঘুরে রহস্য উম্মোচন করে রাতের অন্ধকারে দেয়াল টপকে আসামীকে গ্রেফতার করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিলাল আল আজাদের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্তে খুনিকে আইনের মুখোমুখি করার জন্য তদন্ত, গ্রেফতার করে আদালতে চার্জশীট দাখিলের পর্যায়ক্রমিক বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল আপনাদের কেমন লেগেছে?