চরের জীবন আজও যেনো আটকে আছে আশির দশক

জীবন ও জীবীকা

মাসুম পারভেজ, গাইবান্ধা থেকে: চরের জীবন আজও যেনো আটকে আছে আশির দশকের রূপে; উন্নতির ছোঁয়া এসে পৌঁছেছে কেবল বিদ্যুতের আলোতেই। যদিও গ্রামে কিছু বাড়িতে টিভি ও মোবাইল এসেছে, তবু সাধারণ জীবনযাত্রা—যাতায়াত, চিকিৎসা ও শিক্ষা—সবই বহুদূরে।

চরে চলাচলের প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি; গুরুতর অসুস্থ হলে প্রথমে রোগীকে ঘোড়ার গাড়িতে ঘাট পর্যন্ত নেয়া হয়, তারপর নৌকায় পার করে বিপদজনক নদীপথ পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স খোঁজা হয়। এই দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ পথেই বহু রোগীর প্রাণ হারায়। বিশেষত গর্ভবতী মহিলারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

চরের মানুষের আয় নির্ভর করে মূলত কৃষির ওপর। শস্য-ফসল রাজনীতি না থাকায় চাকরির সুযোগ অপ্রতুল। ছেলেেরা ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ বা নৌকায় মাছ ধরতে শেখে; মেয়েরা ১২-১৩ বছরেই বিয়ের ধুমে কাটছে শৈশব—শিক্ষা আর স্বপ্ন ছেঁটে ফেলা হচ্ছে খুবই ছোটবেলায়।

সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলোর মতে, শুধু বিদ্যুৎ দান করলেই সমস্যা মিটবে না; চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজন সঠিক রাস্তাঘাট, নিকটস্হ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এবং মেয়েদের শিক্ষা-অধিকার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া চরের এই জীবনধারা বদলানো কঠিন।

এটিবি ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোঃ মাসুম পারভেজ বলেন, “চরের মানুষের উন্নয়নে আমরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চাই—স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কাজের সুযোগে যদি তারা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে, তবেই আশির দশকের সেই নিরাশাজনক স্থিতি কাটবে।”

B. প্যারাগ্রাফ (রিপোর্টারের নাম ছাড়া)

চরের জীবন আজও আশির দশকের মতোই—বিদ্যুতের কয়েকটা ঝলক থাকা সত্ত্বেও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা গঠিত কাঁচা পথ, ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকায় ভ্রমণের উপর। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছেছে খুব সীমিত মাত্রায়।

চরে গুরুতর অসুস্থ হলে রোগীকে আগে ঘোড়ার গাড়িতে ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর নৌকা পেরিয়ে দূরবর্তী স্থানে পৌঁছাতে হয়; সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পেলে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়। এই জটিল রুটের কারণে অনেক সময় রোগীর জীবন রক্ষা সম্ভব হয় না—বিশেষত গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।

চরের মানুষের আয় প্রাধান্যে কৃষি নির্ভর। প্রচুর কর্মসংস্থান নেই; ছেলেেরা অল্পবয়সে কৃষিজীবনে যুক্ত হয় এবং মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বদলে শীঘ্রই বিবাহ-বিবাহিত জীবন শুরু করে। ফলে শিক্ষার সুযোগ ও কর্মসংস্থানে তারা পিছিয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরের সমস্যার সমাধান দরকার—ভাল রাস্তাঘাট, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এবং মেয়েদের পড়াশোনাকে উৎসাহিত করার দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি ছাড়া জীবনযাত্রা বদলানো সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় এনজিও ও সমাজকর্মীদের যৌথ উদ্যোগ শেষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *