সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: একসময় চোখ ছিল একেবারেই স্বাভাবিক, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে এখন পুরোপুরি অন্ধ। তবুও থেমে যাননি তিনি।
গণি মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের বুড়িচালা গ্রামে। সংসারে সঙ্গী স্ত্রী হাউসি বেগম (৬২)। দুর্ভাগ্যবশত তিনিও দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী।
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দৃষ্টিশক্তিহীন মো. আব্দুল গণি (৬৭)। অন্ধ হয়েও কারো কাছে হাত পাতেন না গণি মিয়া। বন-জঙ্গল থেকে বাঁশ কুড়িয়ে এনে ইশারায় কেটে ফেলেন, আবার সেই বাঁশ চিড়ে তৈরি করেন কুলা, টেপারি ও ঝুড়ির মতো হস্তশিল্প। প্রতিদিন আলিশার বাজারে বসে এগুলো বানান ও বিক্রি করেন। কাজের ফাঁকে ধর্মীয় গজল গেয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করেন নিজের কষ্ট।
দিন শেষে হাতে আসে মাত্র ৭০-৮০ টাকা। সেটাই তাদের একমাত্র ভরসা। সংসারে সুস্থ কোনো উপার্জনক্ষম মানুষ নেই। দুই ছেলে প্রবাসে থাকলেও তারা নিয়মিত খোঁজখবর নেন না, পাঠান না আর্থিক সহায়তা। ফলে অভাব-অনটন নিয়েই কাটছে বার্ধক্যের জীবন।
প্রতিবেশী জাকির হোসেন বলেন, গণি ভাই খুব পরিশ্রমী মানুষ। চোখে দেখতে পান না, তবুও কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি। বাঁশ কেটে কুলা-ঝুড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। স্ত্রী অসুস্থ, তাই সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে গেছে। সরকারি সাহায্য বা কোনো ভালো মানুষের সহায়তা পেলে তাদের জীবনে স্বস্তি আসতো।
এলাকাবাসী মাঝে মধ্যে সাহায্য করলেও তা যথেষ্ট নয়। অথচ সরকারি সহযোগিতা বা কোনো বিত্তবান মানুষের সহায়তা পেলে অন্তত শেষ বয়সে শান্তিতে বাঁচতে পারতেন দৃষ্টিহীন এই মানুষ ও তার অসুস্থ স্ত্রী।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, গণি মিয়াকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। অন্ধ হয়েও তিনি বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।