বাঁধন মোল্ল্যা, জামালপুর: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের রবিয়ারচর দক্ষিণ পাড়ায় আজ ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। স্থানীয় মৃত ইমান মন্ডলের ছেলে আনারুল মন্ডল (২৫) বিষপান করে মাটিতে কাতরাতে থাকেন। চারপাশে বহু মানুষ উপস্থিত থাকলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি।
খবর পেয়ে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদের নির্দেশে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) কাওসার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি জানান, আমি মেরুরচর ইউনিয়নের বিট কর্মকর্তা হিসেবে এলাকায়ই ছিলাম। ওসি স্যারের নির্দেশ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, আশেপাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। তখন আমার সঙ্গে থাকা এক কনস্টেবলকে নিয়ে নিজ হাতে তাকে অটোভ্যানে উঠাই এবং হাসপাতালে নিয়ে আসি। বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে চিকিৎসকরা দ্রুত বিষওয়াশ করেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য শেরপুর সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
এসআই কাওসার আরও জানান, আনারুল কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এর আগেও তিনি একইভাবে চেষ্টা করেছিলেন। আত্মীয়রা ঢাকায় থাকায় হাসপাতালে কোনো স্বজন উপস্থিত ছিলেন না। পরে এক চাচাতো ভাই আসলে পুলিশ তার সঙ্গে আনারুলকে শেরপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তারা গাড়ি ভাড়া করতে পারছিলেন না। তখন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসআই কাওসার নিজ পকেট থেকে ১,৫০০ টাকা দিয়ে সিএনজির ব্যবস্থা করে তাদের শেরপুরে পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে এক ব্যক্তি আমার নাম্বারে ফোন দিয়ে জানান, তার এক আত্মীয় বিষপান করেছে এবং মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায় রয়েছে। কেউ এগিয়ে আসছে না। আমি তৎক্ষণাৎ অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। অফিসার গিয়ে দেখেন, ভিকটিম মাটিতে কাতরাচ্ছে, মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে, কিন্তু কেউ কাছে যাচ্ছে না। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে ভ্যান ভাড়া করে হাসপাতালে পৌঁছে দেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও ১,৫০০ টাকা দিয়ে শেরপুর সরকারি হাসপাতালে পাঠান। ধন্যবাদ এসআই কাওসার। এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
চিকিৎসকের দ্রুত ব্যবস্থা ও পুলিশের তৎপরতায় বর্তমানে আনারুল সুস্থ আছেন। স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের এই মানবিক পদক্ষেপ না হলে হয়তো একটি তরতাজা প্রাণ ঝরে যেত।