ভোরের দূত ডেস্ক: সরকার দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫০ হাজার টন অকটেন আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে প্রায় ৪১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যায় হবে। গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সময় সার কেনাসহ আরো বেশকিছু সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ৫০ হাজার টন অকটেন আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিষ্ঠান বিএসপির কাছ থেকে প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স প্রাইস অনুসারে প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ব্যয় হবে ৮২ টাকা ৬৯ পয়সা।
সভায় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ৬০ হাজার টন সার কেনাসংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়, এতে কমিটি অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান সাবিক এগ্রি-ইউট্রিয়েন্টসের কাছ থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৬৪ কোটি ৫৯ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৪৭ ডলার ৫০ সেন্ট।
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৫২ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার ২৫০ টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি টন সারে দাম ধরা হয়েছে ৪১৪ ডলার ৮৭ সেন্ট।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার জেএসসি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৩৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৫৪ কোটি ৯০ লাখ ৫১ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৬১ ডলার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীতে ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি গোডাউন নির্মাণকাজের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৬৭ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৯ টাকা। এবং এটি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় মেসার্স এমবিএল-আরইএল জয়েন্ট ভেঞ্চারকে।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজে ব্যয় বৃদ্ধির দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সিএনএস-এটিএম (কমিউনিকেশন, নেভিগেশন অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স-এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) সিস্টেমসহ রাডার সংস্থাপন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় মূল্য চুক্তিমূল্যের তুলনায় ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে প্রায় ১৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার ৫২৮ টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির পর সংশোধিত চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮১৭ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৫২৮ টাকায়। সুপারিশকৃত দরদাতা ফরাসি প্রতিষ্ঠান থ্যালেস এলএএস ফ্রান্স এসএএস।
‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের ক্রয়চুক্তির ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ফলে ব্যয় বাড়ছে ১৩২ কোটি ৮৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬ টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির পর সংশোধিত চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০৫ কোটি ৫৯ লাখ ২১ হাজার ৩৫৫ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে মির আক্তার-সিএএমসিই জয়েন্ট ভেঞ্চার।
এছাড়া গতকাল অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় যার মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মিসরভিত্তিক এনসিআইসি শীর্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে অথরাইজেশন প্রাপ্ত যুক্তরাজ্যের এগ্রোফারট্রান্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে টিএসপি সার আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য বডি ওর্ন ক্যামেরা, ব্যাকএন্ড সিস্টেম ও ডাটা ম্যানেজমেন্ট প্লাটফর্মসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক, বিশেষ পরিদর্শক, সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর, ফাইন্যান্সিয়ার কনসালট্যান্টদের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়েও নীতিগত অনুমোদন দেন অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।