ভোরের দূত প্রতিবেদক: রাজধানীর বনানী থানার আওতাধীন কড়াইল বস্তিতে চলছে অবাধে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা। হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন সাংকেতিক নাম—হেরোইনকে বলা হয় ‘কাঁঠাল পাতা’, ইয়াবাকে ‘পট’ বা ‘গুটি’, আর গাঁজাকে ডাকা হয় ‘সবজি’।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কড়াইল লেকপাড়ের মাটির রাস্তায় প্রতিদিন দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চারটি স্থায়ী স্থানে হেরোইন বিক্রি হয়। এছাড়া গাঁজা বিক্রিরও নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। তবে ইয়াবার জন্য কোনো স্থায়ী স্পট নেই; বিক্রেতারা সাধারণত পকেটে করে ঘোরেন বা ফোনে অর্ডার পেয়ে সরবরাহ দেন।
হেরোইন কাগজে মুড়িয়ে তিন ধরনের পুরিয়ায় বিক্রি হয়, যার দাম ৫০০ টাকা, ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ৬ হাজার টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও তাদের সহযোগীদের যোগসাজশ ছাড়া এ ব্যবসা সম্ভব নয়। নিয়মিত অর্থ লেনদেনের মাধ্যমেই মাদক ব্যবসা টিকে আছে বলে তারা দাবি করেন।
কড়াইল বস্তিকে ঘিরে বেলতলা, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার এলাকাতেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর সরু গলিতে ছড়িয়ে পড়ে মাদকের গন্ধ, কিন্তু ভয়ভীতির কারণে সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, লেকপাড়ের সজনে গাছের নিচে মো. রানার সহযোগীরা হেরোইন বিক্রি করেন। তারা মাদক সঙ্গে না রেখে রাস্তার ধারে বা গাছপালার ফাঁকে লুকিয়ে রাখেন। একজন টাকা নেয়, অন্যজন সেই লুকানো জায়গা থেকে পুরিয়া এনে ক্রেতার হাতে তুলে দেয়। জামাইবাজারে জাহাঙ্গীর নামে এক দোকানি চা-বিস্কুটের আড়ালে হেরোইন বিক্রি করেন। তার ভাই জিল্লুরও একই কাজে জড়িত। যদিও সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, পরে জামিনে ছাড়া পান।
এছাড়া এরশাদনগরে সাগরের স্ত্রী জরিনা গাঁজা বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজার গলিতে কাঞ্চন হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করেন। আর বেলতলায় হাবিব ও নাডা রুবেল যুবদলের পরিচয় ব্যবহার করে ইয়াবা বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার জানান, কড়াইল বস্তিকে তিন ভাগে ভাগ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামিম আহম্মেদ বলেন, বস্তি এলাকায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, এরই মধ্যে বহু মামলা হয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন করে আবারও অভিযান চালানো হবে।