স্টাফ রিপোর্টার: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে কর্মকর্তার অনিয়মিত উপস্থিতি ও দুর্নীতির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সপ্তাহে গড়ে প্রায় দুই দিন কর্মকর্তা অফিসে না থাকায় আর্থিক নথি, বিল-ভাউচার এবং বেতন-ভাতার মতো জরুরি কাজগুলো থমকে যাচ্ছে।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলায় এসএএস সুপারিনটেনডেন্ট পদটি বর্তমানে শূন্য। এই পদে থাকা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান গত কয়েক মাস ধরে রাজশাহীতে একটি উচ্চতর প্রশিক্ষণে আছেন। ফলে পুরো অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন এম. জি. ফারুক আহমেদ চৌধুরী।
অভিযোগ আছে, তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর অফিস থেকে চলে যান এবং রোববার অফিসে থাকেন না। সোমবারও তিনি দুপুরের পর অফিসে আসেন। এর ফলে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে (ছুটির দিন বাদে) সোমবার দুপুর পর্যন্ত কার্যত অফিসে কোনো কর্মকর্তা থাকেন না।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব সরকারি দপ্তর খোলা রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ডিমলার হিসাবরক্ষণ অফিসে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনেক সময় অফিস সকাল ১০টা, ১১টা বা এমনকি দুপুর ১২টার পর খোলা হয়। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেবাগ্রহীতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
সেবা নিতে আসা অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, কর্মকর্তাকে না পেয়ে তাঁদের বারবার ফিরে যেতে হয়। একই সঙ্গে, ঘুষ ছাড়া কোনো বিল-ভাউচার অনুমোদন করা হয় না বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী বলেন, “অফিসে কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। কাজ করতে গেলে নিয়মিত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয়।”
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, “সরকারি অফিসে ঘুষ এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কর্মকর্তা থাকলেও সরাসরি সেবা পাওয়া যায় না।”
স্থানীয় কর্মচারীরা জানিয়েছেন, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দপ্তর। এখান থেকেই বিভিন্ন দপ্তরের বেতন-ভাতা, বিল-ভাউচারসহ সব আর্থিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। অথচ কর্মকর্তার অনিয়মিত উপস্থিতি ও দুর্নীতির কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে ডিমলা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এম. জি. ফারুক আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, “আমি নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকি। ব্যক্তিগত কারণে কোনো দিন দেরি হলে তা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যারা অভিযোগ করছেন, তারা হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “অফিসে কর্মকর্তার অনিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে। সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রংপুর বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক (ডিসিএ) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “ডিমলা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে কর্মকর্তার অনিয়মিত উপস্থিতি ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, সপ্তাহের প্রায় তিন দিন কর্মকর্তার অনুপস্থিতি এবং ঘুষের অভিযোগ সরকারি সেবার প্রতি মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন