বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বালুমহাল ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বিএনপি নেতা মো. কামাল হোসেন নির্ধারিত সীমানা অমান্য করে কালীগঙ্গা নদীতে ড্রেজিং করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অমান্য করে সেতুর কাছাকাছি ড্রেজিং করায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা সেতু ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা সেতুর মাত্র ১০০-১৫০ গজ দূরে বসানো হয়েছে ৮টি ড্রেজার মেশিন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বালু উত্তোলন কার্যক্রম। এতে পাঁচটি বসতভিটা নদীভাঙনের পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে তরা সেতু, রমজান আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, একটি মন্দিরসহ প্রায় শতাধিক স্থাপনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল ঘিওরের তরা ‘ক’ বালুমহাল থেকে প্রায় ৯৬ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের জন্য সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ৩ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করে মানিকগঞ্জ জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এতে ১০ শতাংশ আয়কর ও ১৫ শতাংশ ভর্তুকিতে ৭ কোটি ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকায় ইজারা পান মেসার্স রিজু এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল হোসেন। গত ৩ জুন থেকে শুরু হওয়া এ ইজারা কার্যক্রম চলবে ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
তরা এলাকার মো. রবিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের ঘরটা এবার চলে গেছে। যেটুকু থাকি সেটুকুর অবস্থাও ভয়াবহ। এবার একসাথে ৮-১০ টা ড্রেজার কার্টার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় জায়গা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে এলাকার সবাই চেষ্টা করছি, কোনভাবেই পারছি না। সরকারের কাছে দাবি, যে ঘরবাড়ির মধ্যে থাকছি, তার মধ্যে যেন থাকতে পারি। আর ড্রেজার বন্ধ করতে যদি কোন উদ্যোগ নেয় সরকার।’
ভুক্তভোগী হামেলা বেগম বলেন, ‘আমার ১১ শতাংশ বসতভিটা ছিল। অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করার কারনে বসতভিটার ৯ শতাংশ জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের কিছু বললে মামলা-হামলার ভয়ভীতি দেখায়। এটুকু ভেঙ্গে গেলে স্বামীহারা দিনমজুর দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাব?’
আরেক ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক মাসের মধ্যে আমার বসতভিটার ২২ শতাংশ জমির মধ্যে ১৭ -১৮ শতাংশ জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ঘর থেকে নামলেই নদী। যেভাবে ড্রেজিং করছে, তাতে ঘর হারা হলে যাব কই ‘
রমজান আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নিত্যানন্দ বসাক বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের শব্দের কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। অন্যদিকে তরা সেতু, স্কুল, মসজিদ ও স্থাপনা ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। ইজারাদারকে বারণ করা সত্ত্বেও আরো কাছে এনে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে। তারা সরকারী নিয়মনীতি মানছে না। নদী খনন করবে, এভাবে একটি প্রতিষ্ঠান ও সেতু ধ্বংস করে! নদী খনন করে কিভাবে? খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের নিকট গণপিটিশন দিব।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইজারাদার মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি শুধুই কাগজে কলমে ইজারাদার, মূল ইজারাদার হল পারভেজ। কিভাবে কাটছে সে ভালো জানে, তার কাছে ভালো জানতে পারবেন।’
তবে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের দেখানো কাগজপত্র অনুযায়ী যথাস্থানে ড্রেজিং করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক ও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে কেউ বালু তুলতে পারবে না। আমরা কয়েকটি স্থানে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করেছি। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে ইজারা বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত চিঠি দিব।’
উল্লেখ্য, স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মো. কামাল হোসেন ইজারার ১০০টি শেয়ার বিক্রি করেছেন। প্রতি শেয়ারের মূল্য ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর অর্ধেক কিনে নেন মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ। তার নেতৃত্বেই তরা বালুমহালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।