মাসুম পারভেজ: চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ—মানুষের চোখে এক বিস্ময়কর দৃশ্য। রাত কিংবা দিনের আকাশ যখন হঠাৎই ঢেকে যায়, তখন মানুষের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন জাগে। ইসলামের আগের যুগে আরব সমাজে প্রচলিত ছিল, কোনো মহান ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু ইসলাম এসে এই ভ্রান্ত ধারনাকে ভেঙে দিয়েছে এবং পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে—গ্রহণ কেবল আল্লাহর এক নিদর্শন, এর পেছনে মানুষের কোনো ভূমিকা নেই।
ইতিহাসের এক শিক্ষা: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছেলে ইবরাহিম (রা.) যখন মৃত্যুবরণ করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন অনেক সাহাবি মনে করেছিলেন, এ ঘটনা ইবরাহিমের মৃত্যুর কারণে ঘটেছে। কিন্তু নবিজি (সা.) সে ধারণা নাকচ করে দিয়ে বলেন—“সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন। এগুলো কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে গ্রহণ করে না।” এরপর তিনি সাহাবিদের নিয়ে সালাতুল কুসুফ আদায় করেন এবং দীর্ঘ সময় নামাজ ও দোয়ায় মগ্ন থাকেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, সূর্যগ্রহণের সময় নবিজি দ্রুত মসজিদে গমন করলেন, সবাইকে নামাজে অংশ নিতে বললেন এবং দীর্ঘ কিয়াম ও সিজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করলেন। গ্রহণ শেষ হওয়ার পর তিনি সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন—যখনই এমন ঘটনা দেখবে, আল্লাহকে স্মরণ করবে, নামাজ আদায় করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
সমাজের ভ্রান্ত ধারণা: আজও আমাদের সমাজে নানা ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয়, গ্রহণের সময় তারা ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, কিছু খেতে পারবেন না কিংবা ফলমূল কাটতে পারবেন না। বিশ্বাস করা হয়, এতে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে বা শিশুর শরীরে দাগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
কিন্তু ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। নবিজি (সা.)-এর সময়ে বহুবার গ্রহণ হলেও গর্ভবতী নারীদের জন্য আলাদা কোনো নির্দেশনা তিনি দেননি। বরং সাধারণভাবে নারী-পুরুষ সবার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন—আল্লাহর জিকির, নামাজ, ইস্তিগফার ও সদকার দিকে মনোযোগ দিতে।
ইসলামের নির্দেশনা: চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় করণীয় হলো—আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকা, দীর্ঘ নামাজ পড়া, ইস্তিগফার ও দোয়া করা,দান-সদকা করা
শেষকথা: সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ মানুষের জন্য এক শিক্ষা, এক সতর্কবার্তা। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—আল্লাহ তাআলাই মহাশক্তিধর, আর আমরা তাঁর বান্দা মাত্র। তাই কুসংস্কার নয়, বরং গ্রহণের সময় আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া, ইবাদত ও দোয়ায় নিমগ্ন হওয়াই মুসলিমের প্রকৃত করণীয়।