মশিউর রহমান নাদিম, কিশোরগঞ্জ: দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে বসেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীরা এসে জড়ো হয়েছেন কটিয়াদির পুরাতন বাজারে। আর পূজারীরাও এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে বাদ্যযন্ত্র ও যন্ত্রীদল ভাড়া নিতে। ঢাক ছাড়াও ঢোল, ড্রাম, বাঁশি, সানাই, মন্দিরা, কাঁসি, ঝনঝনি—বাহারি বাদ্যযন্ত্র আর তাদের আওয়াজে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
হাটে ঢুকলেই চোখে পড়ে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মহড়া। ঢাকিদের ঢাক বাজানোর শব্দে তৈরি হয় এক উৎসবের আবহ। বাদ্যযন্ত্রীরা বাদ্য বাজিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। আরেক পাশে চলছে দর-দামের পর্ব। কেউ ঢাকের দল, কেউবা পুরো বাদ্যদল ভাড়া করার জন্য দর কষাকষিতে ব্যস্ত। দরদাম চূড়ান্ত হলেই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন পূজারীরা।
প্রতি দলে ঢাকিদের ভাড়া ধরা হচ্ছে পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা। তবে পুরো বাদ্যযন্ত্রী দল নিতে খরচ হয় এক লাখ টাকারও বেশি। রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পূজারীরা মহাষষ্ঠী থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত বাজানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ করেন এসব দলকে।
হাটে আসা ঢাকিদের কেউ কেউ ভাড়া হয়ে চলে গেলেও অনেক সময় কিছু যন্ত্রী বাদ পড়ে যান। তবে তাঁদের সহযোগিতা করা হয় বলে জানিয়েছেন হাট আয়োজকরা।
ঢাকের হাট কমিটির সভাপতি শীতল কুমার সাহা বলেন, এখানে হাজার হাজার মানুষ আসায় একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে পূজারীরা এসে দর কষাকষি করে ঢাকেদের নিয়ে যান।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক জীবন কুমার সাহা জানান,এটা শুধু কটিয়াদি নয়, সারা বাংলাদেশেরই ঐতিহ্যবাহী হাট। এ হাটকে ঘিরে এক ধরনের সামাজিক মিলনমেলার পরিবেশ তৈরি হয়।
কটিয়াদি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, এখানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কটিয়াদীর রাজা নবরঙ্গ রায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তাঁর প্রাসাদে বাদ্যযন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই আয়োজন থেকেই শুরু হয় ঢাক-ঢোলের এই ঐতিহ্যবাহী হাট। এরপর থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে পূজারীর চাহিদা মেটাতে ঢাকি ও বাদ্যযন্ত্রীরা সমবেত হন কটিয়াদিতে।
বছরের পর বছর ধরে এই হাট এখন শুধু পূজারীদের নয়, দর্শনার্থীদেরও আকর্ষণ করে। বাদ্যের তালে তালে মুখরিত হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি। উৎসবমুখর এ হাটে তাই শুধু বাদ্যযন্ত্রের বেচাকেনা নয়, তৈরি হয় এক অনন্য সাংস্কৃতিক আবহও।
তিন দিনের এ হাট শেষ হবে আগামীকাল রবিবার।