আকিমুল ইসলাম সাজু, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ: মৃতদেহের মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাকে আমরা সাধারণত দু’টি ভিন্ন নামে চিনি— পোস্টমর্টেম এবং ময়নাতদন্ত। একই কাজের জন্য এই দুই শব্দের ব্যবহার প্রায়ই সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করে। এই শব্দের ভিন্নতা মূলত ভাষাগত উৎস এবং আঞ্চলিক ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে।
ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, পোস্টমর্টেম শব্দটি এসেছে লাতিন ভাষা থেকে। এখানে ‘Post’ অর্থ ‘পরবর্তী’ এবং ‘mortem’ অর্থ ‘মৃত্যু’। অর্থাৎ, এর আক্ষরিক অর্থ হলো ‘মৃত্যুর পরবর্তী পরীক্ষা’। এটি মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি আনুষ্ঠানিক পরিভাষা।
অন্যদিকে, ময়নাতদন্ত শব্দটি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণে গঠিত। এখানে ‘ময়না’ এসেছে সংস্কৃত ‘মৃত’ শব্দ থেকে, এবং ‘তদন্ত’ মানে হলো ‘অনুসন্ধান’। ফলে ‘ময়নাতদন্ত’ বলতে মৃতদেহ পরীক্ষা বা মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশে ও এই অঞ্চলে শব্দটি বহুল প্রচলিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষক জানান, উভয় শব্দই একই প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। তবে আঞ্চলিক ও ভাষাগত কারণে মানুষের মুখে ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটি বেশি প্রচলিত হয়েছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাটি আন্তর্জাতিকভাবে পোস্টমর্টেম নামেই পরিচিত। কিন্তু বাংলা গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়।
শব্দের পার্থক্য থাকলেও এই দু’টি পরিভাষার উদ্দেশ্য একই—মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে ন্যায়বিচারের পথে সমাজকে সহায়তা করা।