ভোরের দূত ডেস্ক: জাতীয় পার্টির (জাপা) নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ‘লাঙল’ এর অধিকার নিয়ে আবারও তীব্র লড়াইয়ে নেমেছে একাধিক পক্ষ। মূলত জিএম কাদের বনাম ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নেতৃত্বাধীন অংশের মধ্যেই চলছে মূল বিরোধ। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে আসতে পারে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার আনিসুল-হাওলাদার অংশ ইসিতে চিঠি দিয়ে জানতে চায়—কেন তাদের নাম দলের নিবন্ধন তালিকায় যুক্ত হচ্ছে না। তারা নিজেদেরকেই মূল জাপার নেতা ও লাঙল প্রতীকের দাবিদার হিসেবে উল্লেখ করে। এর মাত্র একদিন আগে জিএম কাদেরপন্থিরা ইসিতে গিয়ে দলের নেতৃত্বের ইস্যুতে কথা বলেন এবং স্পষ্ট জানান যে, দলের গঠনতন্ত্র মেনে অন্য কারও চেয়ারম্যান বা মহাসচিব দাবি করার সুযোগ নেই।
জাপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ মনে করেন, ইসির সিদ্ধান্ত জিএম কাদেরের পক্ষেই আসবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেন, আইন ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের নেতৃত্বই জাতীয় পার্টির একমাত্র বৈধ নেতৃত্ব এবং লাঙল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার। তিনি জানান, গত ৯ আগস্ট দলের দশম জাতীয় কাউন্সিল যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে তিনি চেয়ারম্যান এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের কমিটি ও কাউন্সিলের সব নথি ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লাঙল প্রতীক কোনো ব্যক্তির নয়, এটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ১২ নম্বর জাতীয় পার্টির প্রতীক। তাই নতুন কমিটি গঠনের পর জিএম কাদের আর কোনোভাবে জাপার চেয়ারম্যান পরিচয় দিতে পারেন না।
জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত দল এবং লাঙল মার্কার অধিকারী হিসেবে জিএম কাদেরের নামই এখনো ইসিতে লিপিবদ্ধ আছে। তিনি মনে করেন, নতুন করে লাঙল প্রতীক বা জাপা নামে নিবন্ধন চাওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ কারও নেই।
এদিকে জাপার বিভক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন নিজেই বিভ্রান্তি প্রকাশ করেছেন। আগামী দিনে ইসির ডাকা সংলাপে জাতীয় পার্টি থাকবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “জাতীয় পার্টি বললে আমি একটু কনফিউজড (বিভ্রান্ত) হই। কারণ, ওখানে অন্তত হাফ ডজনের মতো হবে এবং লাঙলের দাবিদারও একাধিক।”
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই জাপা থেকে বহিষ্কৃত হন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন নেতা। এর পরই তারা পাল্টা কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টি (জাপা) ছাড়াও জেপি, বিজেপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিসহ মোট ছয় ভাগে বিভক্ত এরশাদের দল। তবে রওশন এরশাদ-কাজী মামুনুর রশীদ, বিদিশা-এরিক এবং আনিসুল-হাওলাদার—এই তিন অংশ নিজেদের মূল দলের নেতা দাবি করে লাঙল প্রতীক ও নিবন্ধন পেতে আগ্রহী।