ভোরের দূত ডেস্ক: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ আজ ভেসে উঠেছিল স্মৃতির দীপ্তিময় আলোয়; যেন দুই আলোকপুরুষের অনন্ত উপস্থিতি নিভে না যাওয়া প্রদীপের মতো চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছিল শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আবেগের আভায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন হয়ে উঠল নবীণ প্রবীণের স্মৃতিচারণের মিলনক্ষেত্র। এই দিনে স্মৃতিচারণ করা হলো দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে— প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ও ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী এবং সাবেক উপাচার্য, প্রশাসনিক দক্ষতায় খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. আর আই এম আমিনুর রশিদ।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম সভায় বলেন, “অধ্যাপক ড. এম. শমসের আলী ছিলেন একাধারে বিশ্বমানের বিজ্ঞানী, ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ। তিনি বিজ্ঞানের গভীর জ্ঞানকে ইসলামের আলোয় ব্যাখ্যা করেছেন, যা আমাদের কাছে নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। তিনি শুধু একজন শিক্ষকই নন, ছিলেন শিক্ষার্থীদের জন্য আলোর পথপ্রদর্শক, সহকর্মীদের জন্য সাহস ও প্রেরণার উৎস। তাঁর চিন্তা-চেতনা, কর্ম ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রেখেছে। তিনি ছিলেন অসাধারণ জ্ঞানী, মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ এবং পরম সহিষ্ণু একজন মানুষ। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে তিনি দূরশিক্ষাকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করে অগণিত মানুষের জীবনে আলোর দিশা দেখিয়েছেন। ড. শমসের আলী প্রমাণ করেছেন যে, একজন বিজ্ঞানী একইসাথে ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতির আলোচনায়ও সমান দক্ষ হতে পারেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানচর্চা ও কাজ আজীবন অনুকরণীয় হয়ে থাকবে”।
উপাচার্য আরও বলেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আর. আই. এম. আমিনুর রশিদ ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দীর্ঘ সময় তাঁর সহকর্মী হিসেবেও একসাথে কাজ করেছি। তিনি শুধু একজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানীই নন, বরং একজন নিবেদিতপ্রাণ গবেষক, দক্ষ প্রশাসক ও প্রভাবশালী শিক্ষক নেতা হিসেবেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। যিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছিলেন নতুন গতি এবং দিশা।
প্রয়াত দুই উপাচার্যের স্মরনে তিনি আরও বলেন, তাঁদের জীবন ও কর্ম আমাদের চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল বিজ্ঞানী নন, ছিলেন চিন্তাবিদ, তাঁদের দর্শন ও ভাবনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে, প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণের অংশ। উপাচার্য তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, তাঁদের রেখে যাওয়া সৎকর্মের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
সভাপতিত্ব করেন প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস পিএইচডি। তিনি বলেন, “এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অবদান রাখেননি, শিক্ষার মান ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায়ও ছিলেন অগ্রণী। আমরা তাঁদের দেখানো পথেই এগিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মোঃ আনিছুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্মৃতিচারণের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, “তাঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল এক অনন্য সৌভাগ্য। তাঁরা ছিলেন জ্ঞানের বাতিঘর, যাঁদের উপস্থিতি আমাদের প্রতিদিনের কর্মে আলোকিত করত।”
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবনের নামকরণে এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতি অমর রাখার প্রস্তাবও উঠে আসে। দিনটি ছিল শুধু স্মৃতিচারণ নয়, বরং ছিল শ্রদ্ধার অর্ঘ্য, ভবিষ্যতের প্রেরণা এবং একটি অমোঘ প্রতিশ্রুতি—তাঁদের আলো চিরকাল জ্বলে থাকবে।