জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় ৩ জোট: বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি’র ঘিরে কৌতূহল

জাতীয়

ভোরের দূত ডেস্ক: আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে জোট গঠনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান তিনটি পক্ষ—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—কারা কাদের নিয়ে জোট করছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। পর্দার আড়ালে ‘জোট গঠন’ বা ‘আসন সমঝোতা’ নিয়ে আলোচনা চলছে এবং ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে জুলাই সনদ ও নির্বাচনকেন্দ্রিক মতবিরোধ দ্রুতই সমাধান হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান তিন স্টেকহোল্ডার এক ধরনের সমঝোতার পথে হাঁটছে।

জুলাই সনদসহ কিছু ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিদ্যমান মতবিরোধ নিরসনে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরাও চেষ্টা করছেন। তারা ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান এবং ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের নিউইয়র্কে অবস্থানকে আস্থার সংকট দূর করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, নির্বাচন সামনে রেখে মোটা দাগে অন্তত তিনটি প্রধান জোট হতে পারে:

বিএনপি তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। অক্টোবরেই মিত্রদের কতটি আসন ছাড় দেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী নতুন ফ্রন্ট বা নির্বাচনি সমঝোতা করতে কাজ করছে। তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি ইসলামি দলকে কাছে টানার চেষ্টা করছে, যাতে ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনা যায়।

বাম ও মধ্যম ধারার কয়েকটি দল মিলে তৃতীয় একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। আবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বাম গণতান্ত্রিক জোটের ছয় দলসহ সব বাম দল ও সংগঠনকে নিয়ে পৃথক জোট গঠনে তৎপর রয়েছে।

জোট রাজনীতিতে বর্তমানে নতুন কিছু আলোচনা দৃশ্যমান:

জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের (নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান) মধ্যে একীভূত হওয়ার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে নাম ও বড় পদ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।

গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির সরকার গঠন নিয়ে সমঝোতা থাকলেও, জুলাই সনদ নিয়ে মঞ্চের অবস্থান বিএনপির চেয়ে ভিন্ন। গণতন্ত্র মঞ্চ ও এনসিপিসহ নয়টি দল জোট গঠন নয়, বরং জুলাই সনদ ও নির্বাচন নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বামপন্থি কয়েকটি দল জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি বসতে রাজি নয়।

জামায়াতে ইসলামী উভয় কক্ষেই (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চায় বলে জানিয়েছে। যদিও বিএনপি নিম্নকক্ষে পিআরের পক্ষে নয়।

জামায়াত যখন ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে জোট করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন বিএনপিও পাল্টা কৌশল নিয়েছে। তারা আদর্শিকভাবে জামায়াতবিরোধী হিসেবে পরিচিত জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, ছারছীনা পীর এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। যদিও বিএনপি নেতারা হেফাজতের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে এটিকে অরাজনৈতিক সংগঠনের খোঁজখবর নেওয়া বলে দাবি করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ ও নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হওয়া উচিত। জনগণ এখন আর অস্থিতিশীল পথে হাঁটতে চায় না, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *