ট্রাম্পের ‘বিষাক্ত সাপ’ নীতি: ব্রিটিশ বন্ধুত্বের প্রতিদান শুধুই দংশন

আন্তর্জাতিক

ভোরের দূত ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দের একটি কবিতা—‘দ্য স্নেক’—তার নীতি এবং চিন্তাধারার সারমর্ম হিসেবে কাজ করে। হোয়াইট হাউস এটিকে একটি সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্রেও রূপান্তর করেছে। এই কবিতাটি ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে মিলে যায়—তবে এখানে ট্রাম্প নিজেই সেই ‘বিষাক্ত সাপ’।

কবিতাটির মূল বক্তব্য হলো: যখন কেউ বাইরে থেকে আসা কাউকে অতিরিক্ত আপন করে নেয়, তখন সেই ব্যক্তি কৃতজ্ঞতার বদলে বিষাক্ত প্রতিশোধ নিতে পারে। কবিতাটির শেষ লাইন স্মরণ করিয়ে দেয়—”তুমি আমাকে কেন কামড়ালে? তুমি তো জানো, তোমার কামড় বিষাক্ত, আর তোমার কামড়ে আমি মরতে যাচ্ছি।”

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের অতিথি ছিলেন। তিনি উইন্ডসর ক্যাসেলে ভোজে অংশ নেন এবং রাজা চার্লস তাকে ‘নিকটাত্মীয়’ বলে অভিহিত করেন। অথচ দেশে ফিরেই ট্রাম্প যুক্তরাজ্যকে ‘পুরোনো দুনিয়ার নরকের দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

প্রায় এক বছর ধরে স্টারমার ট্রাম্পকে যতটা সম্ভব কাছে টেনে রাখার চেষ্টা করেছেন—এর মধ্যে ছিল দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর, দুর্গে রাতযাপন, চেকার্সে একদিন কাটানো এবং রাজপরিবারের সঙ্গে ফটোসেশন। এর সবই করা হয়েছিল কেবল বিনিয়োগ ও অর্থের আশায়।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য টেক চুক্তিকে ডাউনিং স্ট্রিট ‘রেকর্ড-ব্রেকিং বিনিয়োগ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এটি মূলত এক বছরেরও বেশি আগে ঘোষিত প্রকল্পগুলোকে নতুন করে তুলে ধরা ছাড়া আর কিছু নয়। এই চুক্তিগুলোতে যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণের লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

বিশেষ করে, ব্ল্যাকস্টোন ও গুগলের ডেটাসেন্টার স্থাপনে বড় ধরনের স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে না। নির্মাণকালে সর্বোচ্চ ১,২০০ কর্মী লাগলেও স্থায়ীভাবে প্রতিটি ডেটাসেন্টারে কাজ করবে মাত্র ৪০ জন। এসব ডেটাসেন্টার মূলত ডেটা সংরক্ষণ করবে, উৎপাদন নয়।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এআই বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া রিক্যাপ উল্লেখ করেছেন, এই স্থাপনাগুলো ‘ব্রিটিশ ভূমিতে আমেরিকান সামরিক ঘাঁটির সমতুল্য।’ লন্ডনের পূর্বাঞ্চলীয় টাওয়ার হ্যামলেটস সতর্ক করেছে যে ডেটাসেন্টারের অতিরিক্ত সংযোগ বিদ্যুৎ ও পানির উপর চাপ বাড়াবে, যা ভবিষ্যতে বাড়ি নির্মাণেও সমস্যা তৈরি করবে।

সাবেক ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ডেপুটি গভর্নর জন কানলিফ সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে তাদের আধিপত্যকে অস্ত্রে রূপান্তর করতে পারে এবং হোয়াইট হাউসের নির্দেশ অমান্যকারী যেকোনো দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, ট্রাম্প এবং তার সমর্থিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি ‘বিষাক্ত’ হিসেবে দেখা যায়। তারা সঠিক সংরক্ষণ, ন্যায্য ভাগ বা স্থায়ী কর্মসংস্থানের পরিবর্তে নিজস্ব স্বার্থ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ঠিক কবিতার সাপের মতোই, যাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, সে শেষ পর্যন্ত কামড়েই বসলো।

লেখক: দ্য গার্ডিয়ানের কলামিস্ট আদিত্য চক্রবর্তী

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *