সন্নিবেশ: ইতালির ফুটবল ইতিহাসে গোলপোস্ট মানেই এক অনন্য নাম, জিয়ানলুইজি বুফন। শুধু ইতালির নয়, বিশ্বফুটবলের সর্বকালের সেরা গোলকিপারের তালিকায় তার নাম প্রথম সারিতেই থাকবে। অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্স, ঠান্ডা মাথা আর অদম্য মানসিক শক্তি তাঁকে বানিয়েছিল ফুটবলের সত্যিকারের “ওয়াল” ।
১৯৭৮ সালে ইতালির ক্যারারা শহরে জন্ম নেন বুফন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। শুরুতে মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও ১৩ বছর বয়সে হঠাৎ করেই গোলকিপিং পজিশনে চেষ্টা করেন। আর সেখান থেকেই যেন তার ভাগ্য বদলে যায়। অল্প সময়েই প্রতিভার ঝলক দেখাতে থাকেন এবং ১৭ বছর বয়সে পারমার জার্সিতে সিরি আ’তে অভিষেক হয় তাঁর।
পারমায় প্রথম কয়েক মৌসুমেই প্রমাণ করে দেন যে তিনি আলাদা ধাতুর খেলোয়াড়। ১৯৯৯ সালে উয়েফা কাপ জয়ের স্মৃতি এখনও ভক্তদের মনে গেঁথে আছে। ২০০১ সালে রেকর্ড ৫২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাঁকে দলে ভিড়ায় তুরিনের বুড়ি খ্যাত জুভেন্টাস। সেই সময়ের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি গোলকিপার ছিলেন বুফন।
২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে বুফনের সেভগুলো ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি মাত্র দুই গোল হজম করেছিলেন, একটি ছিল আত্মঘাতী আর অন্যটি পেনাল্টি থেকে। ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে ইতালি যখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়, গোলপোস্টের নিচে সিংহের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন বুফন। পরে ঘোষণা করা হয়, তিনিই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার।
বুফনের ক্যারিয়ার কখনোই শুধু সাফল্যের গল্প নয়। ২০০৬ সালে জুভেন্টাস ক্যালচোপলি কেলেঙ্কারিতে সিরি বি’তে নেমে গেলে অনেক তারকা ক্লাব ছেড়ে চলে যান। কিন্তু বুফন থেকে যান, দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ইতিহাস গড়েন। আবার ফিরিয়ে আনেন জুভেন্টাসকে শীর্ষ লিগে এবং টানা সিরি আ শিরোপা জয়ের অভিযানে বড় ভূমিকা রাখেন।
২০১৮ সালে এক মৌসুমের জন্য ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন বুফন। যদিও সাফল্য খুব বড় কিছু ছিল না, তবুও ইউরোপীয় ফুটবলের নতুন অভিজ্ঞতা তাঁর ক্যারিয়ারকে ভিন্ন মাত্রা দেয়।
২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বুফন। এখন তিনি ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হয়ে তরুণ গোলকিপার গড়ে তোলার কাজ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণায় নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি।
বুফনের নাম শুনলেই ফুটবল ভক্তরা শুধু এক অসাধারণ গোলকিপারের কথা ভাবেন না, ভাবেন এক যোদ্ধার কথা। যিনি কখনো হাল ছাড়েননি, যিনি দলের জন্য সর্বস্ব দিয়েছেন। তার ব্যক্তিত্ব, সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা আর ক্যারিয়ারের দীর্ঘায়ু তাঁকে সত্যিকারের কিংবদন্তি বানিয়েছে।