তুলসীঘাট শামসুল হক ডিগ্রী কলেজে ভুয়া সনদে নিয়োগ কেলেঙ্কারি: তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ক্যাম্পাস অপরাধ

শামসুর রহমান হৃদয়, গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তুলসীঘাট শামসুল হক ডিগ্রী কলেজে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল ভুয়া সনদে নিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের এক ভয়াবহ কেলেঙ্কারি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও দুর্নীতির অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করেছে।

তদন্তে জানা গেছে, কলেজটি সরকারের বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভুয়া সনদে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্তির নামে অর্থ আত্মসাৎ, এবং অন্যান্য অনিয়ম চালিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এইসব কর্মকাণ্ডে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ একরামুল হক খান অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদে এক ব্যক্তিকে ভুয়া সনদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়। কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ একরামুল হক খান এই কাজটি করেন। একাধিক ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ লেনদেন করা হয়েছিল, যা পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়।

তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, সাবেক অধ্যক্ষের অবৈধ কার্যকলাপের ফলে ৫ বছর ধরে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে, যদিও জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সরকারি কোষাগারে এখনও কোনো টাকা জমা হয়নি।

এছাড়াও, কম্পিউটার প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে আরও একটি বড় অনিয়ম উঠে এসেছে। কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী, মাত্র এক জন কম্পিউটার প্রভাষক নিয়োগের অনুমোদন ছিল। কিন্তু, অধ্যক্ষের কারসাজিতে দুই জন শিক্ষককে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করা হয়।

শহিদুল ইসলাম মন্ডল ১৯৯৯ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তার কোনো কম্পিউটার বিষয়ক প্রশিক্ষণ সনদ ছিল না। ব্যবসায় শিক্ষা কোর্সের সনদ দেখিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে তদন্তে বিধি বহির্ভূত প্রমাণিত হয়।

নূর নেহার ইয়াসমিন সরকার ২০০২ সালে নিয়োগ পেয়ে, তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল ইতিহাসে, যা কম্পিউটার প্রভাষক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত ছিল না। তবে, কলেজের অধ্যক্ষ তার একক ক্ষমতাবলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এবং এমপিওভুক্ত করেন।

এছাড়া, কলেজের একটি কারিগরি শাখার শিক্ষক সুমনও ব্যাপক অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি পরীক্ষার সময় টাকা নিয়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে ধরা পড়েছিলেন। এরপরেও, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে কাজ থেকে সরাতে পারেনি, বরং তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই সমস্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক নিন্দার ঝড় তুলেছে। স্থানীয় শিক্ষাবিদ, অভিভাবক ও জনগণ প্রশ্ন তুলেছেন—”কবে এই দুর্নীতিবাজরা আইনের আওতায় আসবে?” তারা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ধরনের দুর্নীতির ঘটনা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রতি এক ধরনের অবমাননা এবং শিক্ষার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। সচেতন মহল আশা করছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *