মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক আইজিপির জবানবন্দি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের দলিল

অপরাধ

ভোরের দূত প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হয়ে বিস্ফোরক জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি স্বীকার করেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমন করতে শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। এ সময় অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন।

চৌধুরী মামুন জানান, আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সরাসরি তাকে ফোন করে শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা জানান। সেই নির্দেশনা সারা দেশে ছড়িয়ে দেন ডিএমপির কর্মকর্তারা। শুধু গুলিই নয়, হেলিকপ্টার ও ড্রোন দিয়েও হামলা চালানো হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়কদের আটক করে ডিবি কার্যালয়ে চাপ প্রয়োগ ও জোরপূর্বক টিভিতে বিবৃতি দেওয়ানো হয়।

সাবেক আইজিপি বলেন, এ সময় তৎকালীন মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনাকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উস্কানি দিতেন। এমনকি আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়ীরাও এই নৃশংসতাকে সমর্থন করতেন। আন্দোলন দমনের বৈঠকগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে পরিকল্পনা করা হতো।

তার জবানবন্দিতে উঠে আসে, শুধু আন্দোলন নয়, গত ১৫ বছরে দেশে গুম, খুন, গোপন বন্দিশালা ও র‌্যাবের অপারেশনগুলোও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো। র‌্যাবের নির্দেশনা আসত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে, যা চেইন অব কমান্ড ভেঙে সরাসরি বাস্তবায়ন করা হতো।

নিজের অপরাধ স্বীকার করে সাবেক আইজিপি মামুন বলেন, “আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। নিহতদের পরিবার ও দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। আমার এই সত্য প্রকাশের মাধ্যমে যদি সামান্য হলেও নৃশংসতার বিচার হয়, তবে আল্লাহর কাছে কিছুটা দায়মুক্তি পাব।”

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “মামুন সাহেবের জবানবন্দি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের এক অকাট্য দলিল। এটি শুধু জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নয়, বরং গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সংঘটিত সব গুম-খুনের বিরুদ্ধেও প্রমাণ হয়ে থাকবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *