আন্তর্জাতিক ডেস্ক: – প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার জাতিসংঘ মানব বসতি কর্মসূচি (ইউএন-হ্যাবিট্যাট)-কে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করার জন্য। তিনি বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় টেকসই ও স্বল্পমূল্যের আবাসন ব্যবস্থা তৈরি এখন সময়ের দাবি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে ইউএন-হ্যাবিট্যাটের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিচালক আনাক্লাউদিয়া রসব্যাকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে দ্রুত নগরায়নশীল এলাকায় সাশ্রয়ী আবাসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মাইক্রোফাইন্যান্সভিত্তিক হাউজিং সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। এসব মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে টেকসই ও স্বল্পমূল্যের ঘর দরকার।”
তিনি উদ্ভাবনী নকশার প্রস্তাব দেন—যেমন বন্যার সময় ছাদকে নৌকার মতো ব্যবহার করা যাবে। “ছাদ এমনভাবে ডিজাইন করুন যেন বন্যার সময় সেটি নৌকা হয়ে ওঠে,” তিনি প্রস্তাব করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও আহ্বান জানান—বিশ্বের বস্তি, ফ্যাভেলা ও অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে আবাসন, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমন্বিত সমাধান খুঁজতে হবে।
নারীবান্ধব আবাসন নকশার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের এমন ঘর বানাতে হবে যা নারীদের প্রয়োজন মেটাবে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করবে।”
বৈঠকে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য টেকসই আবাসনের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলনে অংশ নিতে ইউএন-হ্যাবিট্যাটকে আমন্ত্রণ জানান প্রফেসর ইউনূস।
এছাড়া তিনি প্রস্তাব দেন, ইউএন-হ্যাবিট্যাটের ওয়ার্ল্ড আরবান ফোরাম প্রতিবছর ভিন্ন অঞ্চলের জন্য জলবায়ু-সহনশীল ও স্বল্পমূল্যের আবাসন নকশা নিয়ে একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। নির্বাহী পরিচালক রসব্যাক এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন।
রসব্যাক জানান, বাংলাদেশ বিশ্ব জলবায়ু সংকটের সামনের সারির দেশ হওয়ায় সেখানে ইউএন-হ্যাবিট্যাটের শক্তিশালী উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। তিনি রোহিঙ্গা সম্মেলনে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং আসন্ন মাসগুলোতে বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশকে আগামী ১৭–১৯ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠেয় “জিরো ওয়েস্ট ফোরাম” এবং আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী ওয়ার্ল্ড আরবান ফোরামে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। জাতিসংঘ মহাসচিবের “জিরো ওয়েস্ট অ্যাডভাইজরি বোর্ড”-এর সদস্য হিসেবে প্রফেসর ইউনূস শহর ও বস্তি এলাকায় টেকসই প্রযুক্তিনির্ভর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন।
রসব্যাকও আবাসন খাতে ধাপে ধাপে উন্নয়ন, উন্নত নগর পরিকল্পনা এবং মাইক্রোফাইন্যান্সকে সংযুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—প্রধান উপদেষ্টার আবাসন ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।