শেখ পরিবার ও শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীর অর্থপাচার তদন্তে সরকারের বিশেষ টিম

অর্থনীতি অপরাধ জাতীয়

ভোরের দূত ডেস্ক:

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারসহ দেশের প্রভাবশালী ১০ শিল্পগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অনিয়ম, কর ফাঁকি, ঋণ জালিয়াতি এবং বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়টি অনুসন্ধানে নেমেছে সরকার। এ জন্য গঠিত হয়েছে ১১টি তদন্ত দল। ইতোমধ্যেই এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৭ হাজার ২৬০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র।

তদন্ত কাঠামো ও সমন্বয়

অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেয়ে তিনটি প্রধান সংস্থা—পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)—মিলে যৌথ তদন্ত পরিচালনা করছে। এর সমন্বয়ের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুরক্ষিত কক্ষে এসব তদন্ত–সংক্রান্ত নথি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা

শুধু দেশীয় তদন্তই নয়, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের কাজে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক চারটি প্রভাবশালী সংস্থা। এগুলো হলো—দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (STAR), ইন্টারন্যাশনাল এন্টি করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (ICAR)। এসব সংস্থার সহায়তায় বিদেশে গড়ে তোলা সম্পদেরও খোঁজ মিলছে।

যেসব শিল্পগোষ্ঠী তদন্তের আওতায়

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের পাশাপাশি ১০টি প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর নাম এসেছে তদন্তে। এর মধ্যে রয়েছে—আরামিট গ্রুপ (সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী), এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ ও সামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জব্দ হওয়া সম্পদের হিসাব

তদন্তে এখন পর্যন্ত যে সম্পদ জব্দ বা স্থগিত করা হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ৫৭ হাজার ২৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে—

  • দেশীয় সম্পদ: মোট ৪৬,৮০৫ কোটি টাকা

    • স্থাবর: ৯,৯৯৯ কোটি টাকা

    • অস্থাবর: ৩৬,৮০৬ কোটি টাকা

  • বিদেশি সম্পদ: ১০,৪৫৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা

    • স্থাবর: ৬,০৯৭ কোটি টাকা

    • অস্থাবর: ৪,৩৫৪ কোটি টাকা

এ ছাড়া ১,৫৭৩টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১,৬৮০ কোটি টাকা ও ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৮৮টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫,৫০০ কোটি টাকার শেয়ার ও অর্থ আটকে দেওয়া হয়েছে।

সরকারের অবস্থান

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *