নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে এখনো বিপুলসংখ্যক পরিবার তাদের মোট আয়ের একটি বড় অংশ শুধুমাত্র খাদ্যের পেছনে ব্যয় করছে। জাতীয় পর্যায়ে ১০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার খাদ্য কেনায় ব্যয় করে আয়ের ৭৫ শতাংশ। আবার ৬২ শতাংশ পরিবার ব্যয় করছে তাদের মোট আয়ের অর্ধেক। এর ফলে খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে এবং তৈরি হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ ঝুঁকি।
এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত “ফুড সিকিউরিটি সিচুয়েশন অ্যান্ড কোপিং ম্যাকানিজম ইন বাংলাদেশ” প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএসের সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
জরিপে যা উঠে এসেছে
জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ নিয়মিত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেয়েছে।
৯ শতাংশ পরিবার পুরো এক সপ্তাহ কোনো আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খায়নি।
বরিশালে সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ পরিবার আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত ছিল।
রাজশাহী বিভাগে মাত্র ২৬ শতাংশ পরিবার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেছে।
গ্রাম ও শহরের চিত্র
গ্রামীণ এলাকায় ৩১.৬ শতাংশ পরিবার এবং শহরে ২৫.৫ শতাংশ পরিবার খাদ্যের জন্য আয়ের অন্তত ৬৫ শতাংশ ব্যয় করে।
সিটি করপোরেশন এলাকায় এ হার নেমে এসেছে মাত্র ৬.৫ শতাংশে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তুলনামূলকভাবে ভালো চিত্র দেখা গেছে—এখানে ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ পরিবার আয়ের অর্ধেকের কম খরচ করছে খাদ্যে।
অন্যদিকে সিলেট, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে ২৫–৩৫ শতাংশ পরিবার আয়ের তিন-চতুর্থাংশের বেশি খরচ করছে শুধু খাদ্যেই।
দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা
জাতীয়ভাবে এখনো প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩টি পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
সুপারিশ
প্রতিবেদনে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলায় চারটি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—
সামগ্রিকভাবে সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে অধিক গবেষণা প্রয়োজন।
গ্রামীণভিত্তিক কৌশল নির্ধারণে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আকতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মাসুদ রানা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোকাল পয়েন্ট অফিসার মেহেনা তাবাসসুম। বক্তব্য দেন উপ-মহাপরিচালক ওবায়দুল হক।