অবৈধ পার্কিংয়ের কবলে তেজগাঁও: ৭০ শতাংশ সড়ক ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের দখলে, জিম্মি নগরবাসী

সারাদেশ

ভোরের দূত ডেস্ক: রাজধানীর তেজগাঁও ও আশপাশ এলাকার প্রায় ৭০ শতাংশ সড়ক অবৈধভাবে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাসের দখলে চলে যাওয়ায় এই এলাকার মানুষ ও যাত্রীরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। সড়কগুলোর দুপাশে এমনভাবে যানবাহন রাখা হচ্ছে যে, অনেক সময় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনের সড়কে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আনিসুল হক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেও, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে শুরু করেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়ক দখলের এই চিত্র তেজগাঁওয়ের কেন্দ্র থেকে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে:

সাতরাস্তা মোড় থেকে কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের চারটিই ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের দখলে।

রেলক্রসিং থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন পর্যন্ত সড়ক ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে ভরা থাকে। হলি ক্রস কলেজ পর্যন্ত গাড়ি পার্ক করায় যানজট ফার্মগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

বিজি প্রেসের মতো কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আশপাশের সড়কগুলো পরিকল্পিতভাবে প্রশস্ত হলেও সেগুলোরও ৭০ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের দখলে। এর ফলে ফুটপাতগুলোও পথচারীরা ব্যবহার করতে পারছেন না।

এফডিসি মোড় থেকে গুলশান লিঙ্ক রোড এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণি থেকে হাতিরঝিলের মধ্যবর্তী সড়কেও বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান অবৈধভাবে পার্ক করা হচ্ছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী নিয়ামত হোসেন জানান, ফুটপাতগুলো ট্রাকের দখলে থাকায় এবং ট্রাকের পেছনে অনেকে নেশা করায় সন্ধ্যায় হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।

রাস্তায় অবৈধভাবে পার্ক করা একটি কাভার্ডভ্যানের চালক জানান, তিনি পার্কিংয়ের জন্য ৪০ টাকা ভাড়া দেন ‘তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের ইউনিয়নের লোকজনকে’।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরশাদ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, চালক-শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বাবদ গাড়িপ্রতি ২০ টাকা নেওয়া হয়। তবে তিনি বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ডে পাঁচ শতাধিক গাড়ি রাখার মতো জায়গা থাকলেও বাকি গাড়ির জন্য কোনো স্থান নেই।

বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা এই পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করছেন।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. তোফাজ্জল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারসহ সব সরকারই টার্মিনাল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালকে বহুতল কার পার্কিং তৈরির জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের কারাগারে যাওয়ার পর সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে গুরুত্বারোপ করে বলেন, ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোর মতো পণ্যবাহী গাড়িগুলোও রাখার জন্য শহরের প্রান্তসীমায় স্থায়ী টার্মিনাল তৈরি করতে হবে। তিনি তেজগাঁওয়ের মতো জায়গায় ট্রাকস্ট্যান্ড থাকাকে স্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখেন না।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *