আরেফিন মোহাম্মদ সজীব, শিবচর (মাদারীপুর) : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার হাজার মানুষের স্বপ্ন আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মাণাধীন ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৭০ মিটার দৈর্ঘ্য কলাতলা-নিলখী সেতুর কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেতুটির ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিকরা। এ কারণে সেতুর চর কামারকান্দি প্রান্তের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। অন্য প্রান্তের নির্মাণকাজ চলমান থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটি চালু হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে। ফলে শিবচর উপজেলা সদর থেকে রাজৈর, টেকেরহাট বন্দর এবং গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়ায় প্রবেশের পথ প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমে আসবে। সেতুটি চালু হলে রাজৈর-শিবচর-ভাঙ্গা এই তিন উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে নতুন এক সেতুবন্ধন।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৮৩ মিটার প্রস্থের এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর। ২০২৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুটি আড়িয়াল খাঁ নদের দুই প্রান্তে কলাতলা ও নিলখীকে সংযুক্ত করবে, যা এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। সেতুটি নির্মিত হলে শিবচর ও রাজৈর উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের জমির ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। সেতুটির নির্মাণকাজের তিন ভাগের এক ভাগ শেষ হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
সেতুর সংলগ্ন চর কামারকান্দি প্রান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এই নদী পাড় হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে নৌকা পাওয়া যায় না। এছাড়া খরস্রোত নদী পাড়ি দিতে ভয় লাগে। সেতুটি নির্মান হলে সহজে যাতায়াত করতে পারব। সরকারের কাছে অনুরোধ সেতুটি যাতে দ্রুত নির্মাণ হয়।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করিম জানান, সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আপাতত একপাশের কাজ বন্ধ থাকলেও নদের অপর পাশের কাজ চলমান আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আগেই পাঠিয়েছেন।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, সংশয়ের কিছুই নেই। আমরা প্রতিনিয়তই কাজ করছি। ওখানে (আড়িয়াল খাঁ নদের সেতু প্রান্তে) কিছু জায়গা নদীর রয়েছে, যে কারণে অধিগ্রহণের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা কাগজপত্র ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলেই অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা শেষ করে স্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করব। ক্ষতিগ্রস্ত সকলেই ক্ষতিপূরণ পাবে।