ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট, রাজশাহী: রাজশাহীতে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে প্রতিদিন ভিড় বাড়লেও আশার বদলে ছড়িয়ে পড়ছে হতাশা। চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ ভুয়া চিকিৎসা প্রত্যয়নপত্রের কারণে প্রতিনিয়ত ভিসা প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়ছেন। অসাধু দালালদের জালিয়াতি আর প্রশাসনিক নজরদারির অভাব এ সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে দিনাজপুর থেকে রাজকুমার রায় রাজশাহী ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে আবেদন জমা দেন। বুকে ব্যথা ও শরীরে টিউমারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন, তার জমা দেওয়া চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজ জাল। তিনি বলেন, “আমি জানতাম না কাগজগুলো ভুয়া। ফেসবুকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা এনআইডি ও জমির দলিল চেয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় কাগজ বানায়। পরে আরও দেড় হাজার টাকা দাবি করে। এখন বুঝছি আমি প্রতারিত হয়েছি।”
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ভিসা আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৩০টিতে নকল চিকিৎসা রিপোর্ট ধরা পড়ছে। খ্যাতনামা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে জাল প্রেসক্রিপশন বানিয়ে দালালরা মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে ভিসা প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি ভারতে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগও নষ্ট হচ্ছে।
ভিসা সেন্টারের এক কর্মকর্তা জানান, “অসাধু দালালরা মানুষের সরলতা কাজে লাগাচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তারা জাল কাগজ বানিয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে ভিসা পেলেও হাসপাতালে ভর্তি নেয় না।”
ফেসবুক ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘সহজ ভিসা’ বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব দালাল মানুষকে টানছে। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাধারণ আবেদনকারীরা জটিল প্রক্রিয়া এড়াতে গিয়ে তাদের ফাঁদে পড়ছেন। এক ভুক্তভোগী বলেন, “চিকিৎসার জন্য কষ্ট করে জমানো টাকা দালালদের হাতে দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছি।”
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা মনোজ কুমার বলেন, “যদি কাগজপত্র আসল হয় তবে ভিসা পাওয়া কঠিন নয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে জাল কাগজ জমা পড়লে তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
ভিসা সেন্টার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জালিয়াতি রোধে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। তবে দালালদের গ্রেফতার ও বিচারে স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অধিকার ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় দ্রুত প্রশাসনিক তৎপরতা, দালাল চক্র দমন এবং জনসচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে।