পঞ্চগড়ে ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্যে বিপাকে এক স্কুল শিক্ষক

সারাদেশ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দখলবাজির শিকার হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এক স্কুল শিক্ষক। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ভোগদখলে থাকা প্রায় তিন একর জমি এখন জবরদখলের চেষ্টা করছে একটি প্রভাবশালী মহল। ঘটনাটি ঘটেছে দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের বালাখুড়ী এলাকায়। ভুক্তভোগী ব্যক্তি মো. রেজাউল করিম, টেপ্রীগঞ্জ আদর্শ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেজাউল করিমের পিতা তোজাম্মেল হোসেন ১৯৮৯ সালে দেবীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৬০০৬, ৬০০৭ ও ৬০০৮ নম্বর দলিলের মাধ্যমে ৪.৭১ একর জমি ক্রয় করেন। একই সময়ে রোস্তম আলীর পিতা আব্দুর রাজ্জাক ৬০০৪ ও ৬০০৫ নম্বর দলিলে ৫.৩৩ একর জমি কেনেন। মোট ১০.০৪ একর জমি নিয়ে তাদের মধ্যে যৌথ মালিকানা গড়ে ওঠে।

এর আগে অপর পক্ষ এন্তাজ আলী ও গোলাম রহমান গং ১৯৮৫ সালের ২৯২ ও ২৯৩ নম্বর দলিলের মাধ্যমে একই জমির দাবি করলে বিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে ১৯৯৩ সালে ২৭৯৫ নম্বর “আপোষনামা” দলিলের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা হয়। তাতে তোজাম্মেল হোসেন পান ৩.০০ একর এবং আব্দুর রাজ্জাক পান ৩.৪৪ একর জমি।

অভিযোগ অনুযায়ী, পরবর্তীতে রোস্তম আলী ও তার ভাই জুয়েল রানা স্থানীয় একটি চক্রের সহযোগিতায় রেজাউল করিমের তিন একর জমি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর রেজাউল করিমের বর্গাচাষী জমিতে হালচাষ করতে গেলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় তিনি দেবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (নম্বর: ১১৩৬) করেন।

পরিস্থিতি অবনতি হলে ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় এমআর ২০/২০২৫ নম্বর মামলা দায়ের করেন। পরে ১৮ মার্চ ১৮৮ ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ২০ মে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমি দখলের অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অপরদিকে, জুয়েল রানা পাল্টা মিথ্যা অভিযোগ এনে শিক্ষক রেজাউল করিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জিআর-৫৭/২০২৫ (দেবীগঞ্জ থানায় ১৪/২০২৫) নম্বর মামলা করেন। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযোগের দিন কোনো মারামারির ঘটনাই ঘটেনি। একাধিক বাসিন্দা জানান, “জুয়েল রানার ছোট মেয়ে কয়েক দিন আগে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পায়, সেই ঘটনাকেই ভিত্তি করে ভুয়া মামলা করা হয়েছে।”

সর্বশেষ ২৮ জুলাই রেজাউল করিমের লোকজন রোপা আমন লাগাতে গেলে বাধা দিয়ে হামলার চেষ্টা হয়। এতে তার দুই সহযোগী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রেজাউল করিম বহু বছর ধরে জমিটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন। জমির দাম বাড়ায় প্রভাবশালী একটি মহল এখন তা জোরপূর্বক দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিসের চেষ্টা করা হলেও বিবাদীপক্ষ কোনো সমঝোতায় আসেনি।

দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল গণি বসুনিয়া বলেন, “বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিবাদীরা কোনো সালিসে অংশ নেয়নি, ফলে সমাধান হয়নি।”

আইনের আশ্রয় নিয়েও এখনও কোনো স্থায়ী সমাধান না পেয়ে শিক্ষক রেজাউল করিম ন্যায্য অধিকার ও জমির দখল ফিরে পাওয়ার আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *