মো: মুনির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ মনিরবাগ এলাকার ভাই বন্ধু নামে এক বেকারীতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মিষ্টি ও সন্দেশ তৈরি হচ্ছে। পাড়া মহল্লার দোকান থেকে শুরু করে নামী-দামি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মিষ্টি, সন্দেশসহ নানা বাহারী মুখরোচক খাবার।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ভাই বন্ধু নামক ওই বেকারীতে তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে নানান ধরনের খাবার। স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারী সামগ্রী। কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরি খাবার রাখা আছে সেখানেই নোংরা পরিবেশ, রয়েছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কেমিক্যাল এবং একাধিক পাম ওয়েলের ড্রাম। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি পণ্য। শ্রমিকরা খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিষ্কার ও নোংরা। ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে।
উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীন তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারী সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বিএসটিআই এর কোনো অনুমোদন নেই বেকারীটির।
তাছাড়া এসব বেকারির মালিকরা বিকল্প বেকারি মোড়কে ২ নম্বর খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন চায়ের দোকানে সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফজরের পরই কোম্পানির ভ্যানে বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লায়, অলিগলির জেনারেল স্টোর ও চায়ের দোকানে ওই সব পণ্য পৌছে দেন ডেলিভারিম্যানরা।
উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, বিকল্প বেকারির মোড়কে একাধিক পলিথিনের তৈরি প্যাকেটে ঝুলছে পাউরুটি, বাটারবন, কেক, পেটিস, সিঙ্গারাসহ অন্যান্য খাদ্য পণ্য। বিকল্প বেকারীর উৎপাদিত বেকারি সামগ্রী পাউরুটিসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মোড়কে বিএসটিআই, বিডিএস নম্বর লেখা নেই। মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও কোন উল্লেখ নেই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরী করা এসব খাবার সামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। পেটব্যাথা, শরীর দূর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কারখানার এক কর্মচারী বলেন, দিনের বেলায় তারা কোন পণ্য উৎপাদন করেন না। ফজরের আগেই পণ্য উৎপাদন শেষ হয়ে যায়। রাতে ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশের ঝামেলা কম বলেই পণ্য উৎপাদন রাতেই শেষ করে থাকে।
চা দোকানী আলতাফ বলেন, আমরা গরীব মানুষ, ফুটপাতে চা-পান বিক্রি করে সংসার চালাই। উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নাই। কাস্টমাররা তো আর এসব জিজ্ঞাস করে না। প্যাকেট থেকে কোনমতে তুলে চা বা কলা দিয়ে খেতে ওই সব বেকারি সামগ্রী কিনে নিচ্ছে।
বেকারীর ম্যানেজারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমাদের কারখানায় মালিকের হুকুম ছাড়া এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারবো না। আপনারা পারলে যা কিছু লিখেন গিয়ে।
এ ব্যাপারে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বলেন, যেসব কারখানায় অস্বাস্থ্য ও নোংরা পরিবেশে ভেজাল খাদ্য তৈরি করেছে ওই সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তাদেরকে খাদ্য আইনে সংশোধন হওয়ার পরামর্শ দিব। খাদ্যনীতিমালা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।