মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে মহিলা মাদ্রাসা পড়ুয়া ৯ বছরের এক শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তারই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পলাতক থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাদ্রাসায় ভাংচুর করেছে ভুক্তভোগীর স্বজনেরা।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২ নং আখানগর ইউনিয়নের ফেলানপুর হাজীপাড়া মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসায়।
জানা যায়, আখানগর ইউনিয়নের ফেলানপুর গ্রামের ঐ মাদ্রাসায় গত ২১ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সকালে ক্লাস বিরতির ফাঁকে কৌশলে প্রতিষ্ঠানের রান্না ঘরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে নির্যাতন চালায় অভিযুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক আবু তালেব ।
পরে বিষয়টি অত্র মহিলা মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থী জানতে পারলে প্রধান শিক্ষক আবু তালেব ছাত্রীদের ডেকে বইয়ের উপরের হাত রেখে শপথ করায় কাউকে না বলার জন্য।
কিন্তু কথা আছে সত্যে কখনো চাপা থাকে না আর সেটি আবারও প্রমান হলো একপর্যায়ে মেয়েটি যখন তার মাকে বিষয়টি জানিয়ে দিলে। গত সোমবার রাতে বিষয়টি জানার জন্য শিশু শিক্ষার্থীর বাবা মা মাদ্রাসায় যায় কিন্তু মাদ্রাসা গিয়ে প্রধান শিক্ষকে না পেয়ে ফিরে আসে এবং বিষয়টি এর মধ্যে চার পাশে ছড়িয়ে পরলে আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগীর স্বজনেরাসহ এলাকাবাসি ক্ষিপ্ত হয়ে সেই মাদ্রাসা ভাংচুর চালায়।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থী মুনতাহিনা জানায়, হুজুর আবু তালেব তাকে কাজের জন্য রান্না ঘরে নিয়ে যায় আর সেখানে গিয়ে জোর করে হাত পা মুখ বেধে কাপড় খুলে এই নির্যাতন চালায়। পরে নির্যাতনের বিষয়টি জেনো কাউকে না বলে তাই অনেক ভয়ভীতি দেখায়। সেইসাথে একটি বইয়ের উপরে শপথ করায়। কিন্তু পেট মাথা অনেক ব্যাথা করায় অবশেষে সে তার মাকে হুজুরের কথা বলে দেয়।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবু তালেব সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিশুর মা চায়না বেগম বলেন, “আমি মাদ্রাসায় আমার মেয়ে সু-শিক্ষিত করার জন্য দিছি শুধু তাই নয় যখন আমার মেয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করায় তখন হুজুর আবু তালেব হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিছি যে ওই মেয়ে শুধু আমার না হুজুরেরও আর সেই হুজুর এমন করলো এটা ভাবতে পারিনা। এমন ভন্ড হুজুরের ফাঁসি চাই এর সঠিক বিচার চাই।”
এই বিষয়ে নির্যাতিত শিশুর বাবা মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “আমরা কোথায় বাস করি যে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানে আমার মেয়ে দিছি একজন হাফেজিয়া করার জন্য আর সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকেই আমার মেয়েকে এমন করলো। আমি এর বিচার চাই।”
অভিযুক্ত হুজুর আবু তালেবের বিষয়ে আইনী কোন পদক্ষেপ নিছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন থানায় যাচ্ছি মামলা করার জন্য।
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন,
“ফেলানপুর হাজীপাড়া গ্রামে একটি মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসা আছে আমরা জানতে পারি যে, গত পরশু দিন অত্র মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীকে কাজ করার নামে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে আর ধর্ষণের কথা জানা জানি হলে সে অত্র মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “তালেব হুজুরের নামে ইতিপূর্বে আরো অনেক ঘটনা আছে যেমন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কথা বলে এলাকার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন অসহায় গরিব মানুষের কাজ থেকে জন প্রতি ১ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিছে। যার বিষয়ে তার নামে থানায় অভিযোগ করা আছে। আর এর মধ্যে আবার ধর্ষণ আমরা এলাকা বাসি আইনের কাছে সঠিক বিচার দাবি জানাচ্ছি।”
এই বিষয়ে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আইনুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকা থেকে অনেক শিশু সেখানে কোরআন পড়তে যায় আর সেই খানার শিক্ষক প্রধান আবু তালেব এমন নেককার জনক কাজ করলো এই ভন্ড হুজুরের ফাঁসি চাই।”
এই বিষয়ে অত্র মাদ্রাসার সহকারী সাবিনা বেগম বলেন, হুজুর আবু তালেব প্রায় শিশুদের ডেকে নিয়ে অফিসে হাত পা শরীর ম্যাসাজ করে নিতো যেটা আমি একজন শিক্ষক হয়ে আমার ভালো লাগতো না। কিন্তু আবু তালেব হুজুর এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক তাই কিছু বলতে পারতাম নাম। তবে মুনতাহিনার বিষয়টি আমি হুজুরে বউয়ের মাধ্যমে বুঝতে পারছিলাম আর সেটা আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। এটা সকল শিক্ষকদের জন্য লজ্জাজনক বিষয়। এমন শিক্ষকের সর্বচ্চ শাস্তি হওয়ার প্রযোজন।”
তবে এই বিষয়ে অভিযুক্ত আবু তালেব হুজুরের মা খলেছাতুন নেছা ছেলের দোষ স্বীকার করে বলেন, “সত্যে কখনো চাপা থাকে না।”
আর ছেলে কোথায় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গত কালকে ঠাকুরগাঁওয়ে জানি কি কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে আর বাসায় আসেনি। আর ফোন ও বন্ধ আল্লাহ জানে আমার ছেলে আছে কোথায়।”