দেম্বেলের হাতেই ব্যালন ডি’অর

আন্তর্জাতিক খেলাধুলা

সন্নিবেশ: ২০২৫ সালের ব্যালন ডি’অরের মালিক এবার উসমান দেম্বেলে। একসময় যাকে নিয়ে ফুটবল বিশ্বে হতাশা আর আক্ষেপ ছিল, আজ সেই প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) তারকার হাতেই উঠল ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার।

পিএসজি এই মৌসুমে জিতেছে তাদের ক্লাব ইতিহাসের প্রথম ইউরোপীয় কাপ, চ্যাম্পিয়নস লীগ। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটির জন্য এটি সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন, আর কাতারি মালিকানার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। লুইস এনরিকের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আর দলীয় নান্দনিক ফুটবলের কেন্দ্রে ছিলেন দেম্বেলে, যিনি অবশেষে নিজের অপূর্ণ প্রতিভাকে পরিণত করেছেন।

দেম্বেলের ক্যারিয়ার শুরু থেকেই ছিল উত্থান-পতনের গল্প। রেনেস থেকে ডর্টমুন্ড হয়ে মাত্র এক মৌসুম পরই তিনি ১৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সেলোনায় যোগ দেন। অত অল্প বয়সে এত বড় অঙ্ক ঠিক সামলে উঠতে পারেননি তিনি। ইনজুরি, অনিয়মিত জীবনযাপন আর চাপের কারণে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে ক্যাম্প ন্যু-তে নিজের অনেক সময় নষ্ট করেছেন।

যদিও জাভির অধীনে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু স্থায়ীভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। অবশেষে ২০২৩ সালে তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পিএসজি যখন নেইমার ও মেসিকে বিদায় দেয়, তখন দলটি আর তারকা কেন্দ্রিক না হয়ে দলে ডিসিপ্লিন ও একটি দল হয়ে খেলাকে অগ্রাধিকার দেয়। শুরুতে কিলিয়ান এমবাপ্পের সহচর হিসেবে খেললেও ২০২৪ সালে এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়ার পর দেম্বেলেকে সামনে রেখেই এনরিকে নতুন দল গড়েন।

ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে লিগে দেম্বেলের ২১ গোলের মধ্যে ১৬ গোল আসে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য। উইঙ্গার থেকে প্রকৃত স্ট্রাইকারে রূপান্তরিত হয়ে তিনি শুধু গোলই করেননি, সামনে থেকে প্রেসিংয়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন। এককথায় দলের প্রাণপুরুষে পরিণত হয়েছেন তিনি।

এদিকে, দেম্বেলে আর এমবাপ্পে দুজনেই প্রায় একসঙ্গে ইউরোপীয় ফুটবলে প্রবেশ করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে এমবাপ্পে এগিয়ে ছিলেন, বিশ্বকাপ জয় তার কৃতিত্বের মুকুটে সেরা পালক। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে ছবিটা বদলো গেছে । যে পিএসজি ক্লাবের উপর ভর করে নেইমার ও এমবাপ্পের মত তারকারা বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেছিল, এই ক্লাবে নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে যাওয়া দেম্বেলেই এখন বিশ্ব মুকুট ধারী।

ব্যালন ডি’অরকে ঘিরে সবসময় এমবাপ্পের নাম উচ্চারিত হয়ে এসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারই সতীর্থ দেম্বেলে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। ফুটবল বিশ্বে আজ সেই রূপকথার দিন, যেদিন সব সমালোচনা, আক্ষেপ আর হতাশাকে পেছনে ফেলে উসমান দেম্বেলে প্রমাণ করলেন, সময় এলে তিনিও পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *