রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। এ ঘটনার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সংগঠনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ফোরামের নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা যেখানে হুমকির মুখে, সেখানে কোনোভাবেই নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়।
শিক্ষক ফোরামের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী তার গাড়ি আটকে দেয়। এ সময় তারা জোর করে উপ-উপাচার্যকে গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করে এবং গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, গাড়ির ওপর টাকা ছুঁড়ে মারে এবং প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, শিক্ষক ও কর্মচারীদেরও ওই শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। আকস্মিক এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষক ও কর্মকর্তারা একে নজিরবিহীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মবিরতির ডাক দেন। তারা দাবি জানান, হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
তবে দাবি পূরণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সোমবার থেকে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা, অফিস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা হামলাকারীদের ‘ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলার মতো ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে।”
এ সময় তারা উপ-উপাচার্য ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তারা স্পষ্ট করে বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ফিরে যাওয়া হবে না।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, “আমরা শিক্ষা দিতে চাই, কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষকদের মর্যাদা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
তারা আরও বলেন, “আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। প্রয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন সারা দেশের শিক্ষক সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী জানান, টানা কর্মবিরতির কারণে তাদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। অনেকে থিসিস, পরীক্ষা ও ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তিত। তবে একই সঙ্গে তারা শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একবাক্যে জানিয়েছেন, হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবাই অপেক্ষা করছেন প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপের জন্য।