সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি, শীতকালীন আবাদ নিয়ে শঙ্কা

আবহাওয়া

ভোরের দূত ডেস্ক: সিরাজগঞ্জে আবারও দ্রুত বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগে হঠাৎ পানির স্তর বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের কৃষকেরা নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশেষ করে যারা আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করেছেন, তাদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পানি আরও বাড়লে ক্ষেত প্লাবিত হয়ে কৃষকের মাথায় বড় ধরনের লোকসান নেমে আসতে পারে।

গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.১৩ মিটার, যা গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ১৫ সেন্টিমিটার। বর্তমানে পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানির উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ১৩.৮০ মিটার, যা বিপদসীমার মাত্র ১ মিটার নিচে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, “উজানে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দু’একদিন এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে বর্তমানে বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই।”

রতনকান্দি ইউনিয়নের কৃষক  আব্দুল মমিন বলেন, “আমরা শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছি। চারাগুলো গজাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় আমরা খুবই চিন্তিত। ক্ষেত ডুবে গেলে আমাদের সব খরচ ও পরিশ্রম নষ্ট হয়ে যাবে।”

কৃষক আলামিন বলেন, “গত বছরও হঠাৎ পানি বাড়ায় অনেকের সবজি ক্ষেত ডুবে গিয়েছিল। তখন আমরা ঋণ করে চাষ করেছিলাম, কিন্তু লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও একই ভয় পাচ্ছি।”

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, প্রায় প্রতিবছর বর্ষা শেষে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনের কারণে তাদের আবাদে ক্ষতি হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলার কয়েকশ একর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছিল। এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

পানির সঙ্গে ভাঙনের ভয়ও জেগে উঠেছে নদী পাড়ের মানুষের মনে। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে ইতিমধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকে বাড়িঘর হারিয়ে অন্যত্র সরে গেছেন।
চরাঞ্চলের গৃহবধূ রহিমা বেগম বলেন, “প্রতিবার পানি বাড়লেই ভাঙন ভয়াবহ হয়। আমাদের বাড়িঘর নদীতে চলে যাবে কি না, সেই ভয়ে ঘুমাতে পারি না।”

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডিএ) আবদুল মতিন বলেন, “শীতকালীন সবজি চাষ এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগাম বাজারে ভালো দাম পাওয়ার জন্য অনেকেই এখন চাষ শুরু করেছেন। পানি যদি আরও বাড়ে, তবে কিছু ক্ষতি হতে পারে। তবে আমরা কৃষকদের সতর্ক করছি যাতে তারা বিকল্প জমি প্রস্তুত রাখেন এবং প্রয়োজনে পরবর্তী ধাপে আবার চাষাবাদ শুরু করেন।”

কৃষকেরা বলছেন, শুধু পানি বৃদ্ধিই নয়, ভাঙন ঠেকাতেও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তারা দ্রুত কার্যকর প্রতিরোধক ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং আগাম সতর্কবার্তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *