কোচিং সেন্টার বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় মবের শিকার হয়েছেন পরানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক

ক্যাম্পাস

আল আমিন স্বাধীন, মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় কোচিং সেন্টার বন্ধে নোটিশ দেওয়ার জন্যই মবের শিকার হয়েছেন পরানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ। শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল। মব সৃষ্টি করে পদত্যাগে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যালয় পাশের একটি ভাড়া বাসায় নিয়মিত কোচিং সেন্টার চালিয়ে আসছিলেন সহকারী শিক্ষক (গণিত) জিয়াউল হক জিয়া। এ কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থী প্রতি ২ হাজার টাকা চুক্তিতে পাঠদান দিয়ে আসছিলেন তিনি। গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ কোচিং বন্ধের জন্য নোটিশ দেন। এতে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শিক্ষক জিয়াউল হক জিয়া।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, অষ্টম শ্রেণির ২৪জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে গত ১ সেপ্টেম্বর অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে শিক্ষক জিয়াউল হকের কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ৪৯ হাজার ৬৫১ টাকা সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহমানের হেফাজতে থাকলেও তা ব্যাংকে জমা দেননি তিনি। ৮ সেপ্টেম্বর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন প্রধান শিক্ষক। এরপর থেকেই জিয়াউল হক ও আব্দুর রহমান প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনকে উসকে দিয়ে মব তৈরি করা হয়। সেই মবের সামনে প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার মোটরসাইকেল।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষক জিয়াউল হক ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার ‘ডামি প্রার্থী’ ছিলেন। বর্তমানে পরানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। অপর শিক্ষক আব্দুর রহমানও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আওয়ামীপন্থী এই দুই শিক্ষকের তোপের মুখে অন্য শিক্ষকেরা মুখ খোলার সাহস পেতেন না। তারাই মব সৃষ্টি করে বিদ্যালয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনার অবতারনা করেছে।

শিক্ষার্থী অভিভাবক চম্পা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে মাছুমা আক্তার অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। তাকে জিয়া স্যারের কোচিংয়ে ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অভিভাবকদের সম্মতিতে বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত পাঠদানের ব্যবস্থা করেন প্রধান শিক্ষক। এতে জিয়া স্যার অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন। জের ধরেই বিদ্যালয়ের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি হয়।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লাভলী আক্তার বলেন, ‘দুই সহকারী শিক্ষকের ইন্ধনে বিদ্যালয়ে মব সৃষ্টি হয়েছে। এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে সুষ্ঠু পরিবেশে শিক্ষকতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অর্থ জমা না দেওয়া এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নোটিশ দেওয়ার কারণে আমাকে টার্গেট করা হয়। ধর্মীয় শিক্ষক মোতাসিম বিল্লাহর সহায়তায় শিক্ষক জিয়া ও আব্দুর রহমান মব তৈরি করে আমাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আমার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল।’

অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহমান মোবাইলফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অপর সহকারী শিক্ষক জিয়াউল হকের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ থানায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *