তারিক লিটু, কয়রা (খুলনা): খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ফুলতলা বাজারে সুমন বাপারীর কসাইখানার মাংস খেয়ে এলাকায় অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি রোগে আক্রান্ত গরু কম দামে কিনে বাজারে এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক জীবাণুর কারণে সৃষ্ট এক ধরনের সংক্রামক ব্যাধি। সাধারণত গবাদিপশু যেমন গরু, ছাগল ও ভেড়ায় এ রোগ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত পশুর মাংস বা রক্ত মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এর লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় জ্বর, শরীরে কালো ফোসকা, ঘা, বমি ও শ্বাসকষ্ট।
এলাকার প্রতিবেশী হওয়ায় নাম পপ্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলতলা গ্রামের একজন জানান , তিনি নিয়মিত সুমনের দোকান থেকে গরুর মাংস খেতেন। সম্প্রতি তিনি অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তিনিই নন, গ্রামটির আরও কয়েকজন একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সুমন বাপারীর দোকান অনুমোদনবিহীন হলেও গত দুই বছর ধরে মহারাজপুরের ফুলতলা এলাকায় মাংসের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ভোররাতে রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাংস বিক্রি করেন তিনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শুভ বিশ্বাস বলেন, “উপজেলার সব কসাইখানা অবৈধ। তাদের কারও নিবন্ধন নেই। নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা করা হয় না। সাধারণত গরু ভোরে জবাই করা হয়, তখন তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করে না। কসাইখানায় কোনো অনিয়ম হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমাদের দায়িত্ব মূলত তদারকি করা। গত সপ্তাহে আমরা কসাইদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “অসুস্থ বা মৃত পশুর মাংস খেলে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রোগাক্রান্ত পশু জবাই ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করা জরুরি। অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত পশু জবাই করলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শান্তানু অধিকারী বলেন,
“সুমন বাপারী অবৈধভাবে দোকান পরিচালনা করছেন। দোকান পরিচালনার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ হতে তিনি কোন ট্রেড লাইসেন্সও গ্রহণ করেনি। পূর্বেও তাঁর বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ শুনেছি।”
অভিযোগের বিষয়ে কসাই সুমন বাপারী বলেন,
“আমি মাঝে মাঝে গরু জবাই করি, আবার কখনও পাশের বাজার থেকে কিনে বিক্রি করি। সাধারণত ফজরের নামাজের সময় গরু জবাই করি। অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে ভালো জানি না, তবে গত সপ্তাহে পশু হাসপাতালে ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম।”
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাজিব বলেন, “ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি অ্যানথ্রাক্স হতে পারে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন আছে। রোগে আক্রান্ত গবাদীপশুর মাংস না খাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন”।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ভোক্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”