কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ‘ডেরা’ রিসোর্ট

অপরাধ

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা দীর্ঘদিন ধরে বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে জমি দখল, অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ, পরিবেশ ধ্বংস, অগ্নি নিরাপত্তায় অবহেলা ও সামাজিক ক্ষোভের একের পর এক অভিযোগ।

ডেরা রিসোর্টের ভেতরে শতাধিক মৃত ব্যক্তির কবর থাকা একটি কবরস্থানের জমি ব্যবহার করে ঘর নির্মাণ ও হরিণ পালন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, মৃত শোভাতনের পরিবার এবং মৃত আশেক আলীর দেওয়া মোট ১২ শতক জমি ওয়াকফ হিসেবে কবরস্থান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত সেখানে ১০০–১৫০ জনকে দাফন করা হয়েছে।

মৃত শোভাতনের ছেলে হযরত আলী অভিযোগ করে বলেন,

“কবরস্থানের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে ডেরা কর্তৃপক্ষ। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কবরস্থান সংরক্ষণ করবে, ফুলের বাগান করবে, আমরা জিয়ারত করতে পারব। কিন্তু এখন কাঁটাতারের বেড়ার আড়াল থেকে শুধু দেখা যায়। এর ওপর ঘর তুলে হরিণ পালন করছে। এটা মৃতদের প্রতি চরম অসম্মান।”

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, ডেরা রিসোর্ট ছয়টি হরিণ পালনের অনুমতি পেলেও বর্তমানে ১৯টি হরিণ রাখা হয়েছে, যা আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। বাণিজ্যিক লাইসেন্সের আবেদন করলেও এখনো তা অনুমোদিত হয়নি।

অগ্নি নিরাপত্তার দিক থেকেও ডেরা রিসোর্ট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিসের শর্ত পূরণ না করায় গত দুই অর্থবছর ধরে রিসোর্টটির ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। ২০২২ সালে দেওয়া ফায়ার লাইসেন্সের (নং: ডিডি/ঢাকা/৩২৮৯৯/২০২২) মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অনুমোদন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর ব্যবহারের কথা থাকলেও বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি আয়তন ব্যবহার করছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।

বহুবার লিখিত নোটিশ দিয়েও ফায়ার সেফটি প্ল্যান প্রণয়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটি অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ অনুযায়ী বিধি লঙ্ঘন করেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ডেরা কর্তৃপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে আশপাশের জমি দখল করেছে এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনের একাধিক দপ্তর—পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ডেরা রিসোর্ট একাধিক আইন ভঙ্গ করে পরিচালিত হচ্ছে।

ডেরা রিসোর্ট নিজেকে বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করলেও এর আড়ালে জমি দখল, কবরস্থান অবমাননা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ভঙ্গ এবং অগ্নি নিরাপত্তায় অবহেলার মতো গুরুতর অনিয়ম লুকিয়ে রয়েছে। এখন প্রশ্ন থেকে যায়—অভিযোগের এ দীর্ঘ তালিকার মুখে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কি জবাব দেবে, আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কবে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে?

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *