নেপালে অস্থিরতা: কারাগার থেকে পালাল ১৩ হাজার ৫০০ বন্দি

আন্তর্জাতিক

মাসুম পারভেজ: নেপালে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশজুড়ে একযোগে সংঘর্ষ, কারাগারে দাঙ্গা এবং বন্দিদের ব্যাপক পালানোর ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি হয়েছে। নেপাল পুলিশের মুখপাত্র বিনোদ ঘিমিরে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৫০০-এর বেশি বন্দি বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়েছে। মঙ্গলবার সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার কথাও তিনি নিশ্চিত করেন।

নওয়ালপারাসি পশ্চিম জেলা কারাগার থেকে ৫০০ জনের বেশি বন্দি ভেতরে আগুন লাগিয়ে ফটক ভেঙে বেরিয়ে যায়। কাঠমান্ডুর দিল্লিবাজার কারাগার থেকেও পালানোর চেষ্টা হয়, তবে একজন বন্দিকে স্থানীয়রা ধরে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। বাঁকে জেলার বৈজনাথ রুরাল মিউনিসিপালিটি–৩ এর নওবাস্তা সংশোধনাগারে বন্দিরা নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলা চালালে পুলিশের গুলিতে পাঁচ কিশোর বন্দি নিহত ও চারজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় সেখানে ১৭৬ বন্দির মধ্যে ৭৬ জন পালিয়ে যায়। একই অঞ্চলের আরেকটি কারাগার থেকেও ১৪৯ জন বন্দি পালিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি বড় কারাগার থেকে বিপুল সংখ্যক বন্দি পালিয়েছে। এর মধ্যে দিল্লিবাজার কারাগার থেকে ১,১০০, চিতওয়ান থেকে ৭০০, নাখু থেকে ১,২০০, সুনসারির ঝুমকা থেকে ১,৫৭৫, কাঞ্চনপুর থেকে ৪৫০, কৈলালী থেকে ৬১২, জলেশ্বর থেকে ৫৭৬, কাস্কি থেকে ৭৭৩, ডাং থেকে ১২৪, জুমলা থেকে ৩৬, সোলুখুম্বু থেকে ৮৬, গৌর থেকে ২৬০ এবং বাঝাং থেকে ৬৫ বন্দি পালিয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ নেপালের বাগমতী প্রদেশের সিন্ধুলিগাদি জেলা কারাগার থেকে ৪৩ জন নারীসহ মোট ৪৭১ জন বন্দির পালানোর তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি ওঠে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের দমন করতে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয় এবং গুলিও চালায়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করার পর দেশজুড়ে সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেপালি সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করে এবং বুধবার সকাল থেকে কারফিউ কার্যকর করে।

২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকে নেপাল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে দেশটিতে ১৩টি পৃথক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু স্থিতিশীলতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *