লামায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ দোকান প্লট ৩৩ বছর ধরে প্রভাবশালীদের দখলে

সারাদেশ

আমিনুল ইসলাম খন্দকার, বান্দরবান: বান্দরবানের লামা উপজেলায় আজিজনগর ইউনিয়নের চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১টি দোকান প্লট গত ৩৩ বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। এ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে ৪২ বার আবেদন করেও দোকানগুলো উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দীর্ঘদিনেও সমাধান না হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৬০ সালে উপজেলার চাম্বি মৌজার ১৮নং খতিয়ানের ১৯২ ও ১৯৩নং দাগে ৯৮ শতক জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৩২ জন। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯২ সালে প্রধান শিক্ষক ইকবাল আহছানের সময় প্রথমে পশ্চিম কর্নারের একটি দোকান প্লট দখল করেন এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর চৌধুরী। পরে তিনি আরও তিনটি প্লট দখলে নেন। এ ঘটনায় তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা করেন। প্রথমদিকে কিছুদিন ভাড়া দিলেও পরবর্তীতে তিনি আর কোনো ভাড়া দেননি।

আবু জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ আওয়ামী মোটর চালক লীগের বান্দরবান জেলা সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি। তার দেখাদেখি একই বছর আরও কয়েকজন দোকান দখল করেন— ইসহাক ভূইয়া ২টি, জাকারিয়া ১টি, আব্দুল লতিফ ২টি, লকিয়ত উল্লাহ ২টি ও মো. রফিক ১টি। এর মধ্যে একমাত্র ভাড়াটিয়া কামাল হোসেন এখনো নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করছেন। বাকিরা ভাড়া না দিয়ে কেউ কেউ দোকান উপ-ভাড়া দিয়ে নিয়মিত টাকা নিচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রায় ২৫ শতক জমি দখলদারদের দখলে। ৩৩ বছর ধরে তারা দোকান তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। সাবেক প্রধান শিক্ষকরা, পরিচালনা কমিটি এবং আমি নিজেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আদালতে ৪২টি চিঠি দিয়েছি, কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি।”

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য আবুল খায়ের জানান, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালে নিজের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীরকে নামমাত্র ভাড়ায় চারটি দোকান ভাড়া দেখান, যেখানে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ছিল না। কয়েক মাস ভাড়া দেওয়ার পর তিনি আর কোনো ভাড়া দেননি। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে জসিম উদ্দিন পলাতক থাকলেও বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার হয়নি। ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর বলেন, “এসব দোকানের জমি সড়ক ও জনপদের, স্কুলের নয়। তাই আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভাড়া দেই না।”

প্রধান শিক্ষকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তদন্ত শেষে জানান, বিদ্যালয়ের জমি দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

পরে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) উপজেলা প্রশাসনের শুনানিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয় ও সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমির সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপাতত বকেয়া ভাড়া বিদ্যালয়ের হিসাবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় দোকানগুলো সড়ক ও জনপদের জমিতে, তবে ভাড়ার টাকা তাদের কোডে প্রেরণ করা হবে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন বলেন, “সড়ক ও জনপদের জায়গার অজুহাতে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে সার্ভেয়ার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। বকেয়া ভাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষের হিসাবে জমা দিতে হবে, অন্যথায় দোকানদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *