জীবিত থাকতেই কবর খুঁড়ে আলোচনায় ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যবসায়ী

সারাদেশ

আব্দুন নুর আজাদ, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলার সালান্দর ইউনিয়নের কচুবাড়ি-কৃষ্টপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ডক্টর গোলাম আল ফারুক জীবদ্দশায় নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কচুবাড়ি-কৃষ্টপুরের একটি শান্ত ও গাছপালায় ঘেরা জায়গায় ডক্টর গোলাম আল ফারুক তাঁর খামারবাড়ির এক কোণে মাটির দিয়ে ছোট একটি ঘর নির্মাণ করেছেন। ইট-পাথর নয়, সাধারণ মাটি দিয়ে গড়া এই ঘরটিতে টিনের ছাউনি রয়েছে এবং দুই দিকেই দরজা ও জানালা করা আছে। ঘরের ভেতরে মাটি খুঁড়ে সেখানে একটি কবর বানানো হয়েছে; কবরটির ওপর একটি কাঠের খাট ফেলে তাতে কোলবালিশ ও সাদা চাদর দেখা যায়—এলাকার লোকেরা বলছেন, কখনো কখনো তিনি ওই খাটিয়ায় বসে বা শুয়ে তার নিজের মৃত্যুসংক্রান্ত ভাবনা-চিন্তা করতেন।

দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবী ও ধর্মপ্রাণ হিসেবে পরিচিত ফারুক সাহেব স্থানীয়দের নিকট দানশীলতার জন্যও সুপরিচিত। স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি প্রায়ই মনে করিয়ে দিতেন যে মৃত্যু নিতান্তই অনিবার্য, তাই আগে থেকেই শেষ ঠিকানার ব্যবস্থায় থাকা উচিত। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “তিনি বারবার বলতেন মৃত্যুকে ভাবলে মানুষ বিনয়ী হয় ও জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে চলবে।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আব্দুল হালিম নামের এক পল্লীবাসী জানান, প্রথমে তারা বুঝেছিলেন এটি কোনো ছোট মাজার বা ধর্মীয় স্থাপনা; পরে জানতে পেরে বিস্ময় হয়। তরুণ নাজমুল হক বলেন, “অনেকেই মৃত্যুকে ভয় করে; কিন্তু তিনি সেটা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছেন—এটি আমাদেরও ভাবায়।” জনমনে কৌতূহল বাড়ায় প্রতিদিনই আশপাশের গ্রামের মানুষ ও পথচারীরা এসে ওই ঘরটি দেখে যাচ্ছেন; কেউ কেউ ছবি তুলছেন, কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন-চিন্তা করছেন।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি কীভাবে দেখা উচিত সে সম্পর্কে স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, “মৃত্যু স্মরণ করা মু’মিনের একটি গুণ। জীবদ্দশায় কবর খোঁড়া আমাদের সমাজে প্রচলিত নয়, তবু ব্যক্তিগত মাত্রায় মৃত্যুচিন্তা স্মরণে রাখা প্রশংসনীয়। তবে এটা যে সবাই অনুসরণ করবে এমন নয়—এটি ব্যক্তিগত অনুশীলন হিসেবে নেওয়া উচিত।”

এ ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে উঠে এসে এলাকার সামাজিক আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এটিকে ধর্মচেতনার প্রকাশ হিসেবে গ্রহণ করছেন, কেউ কেউ এটিকে ব্যতিক্রমী ও বিতর্কিত মনে করছেন—তাই এখন কচুবাড়ি-কৃষ্টপুরের সেই মাটির ঘরটি স্থানীয়দের মাঝে জীবনচিন্তা ও মৃত্যুসংক্রান্ত বিস্তর প্রশ্নের উদ্বোধন করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *