ওয়াজ থেকে কর্মসংস্থান, ধর্ম থেকে দক্ষতায়—আহমাদুল্লাহর স্বপ্নপথে প্রবাসী বনি আমিনের হাত বাড়ানো

জাতীয়
তরুণদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পথে আলেমের উদ্যোগ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে প্রবাসী বনি আমিনের সহায়তায় নতুন সম্ভাবনার সূচনা।
বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়াসে সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম আলোচিত নাম শায়েখ আহমাদুল্লাহ। তিনি শুধু ধর্মীয় বয়ান বা ওয়াজেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ সমাজকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশেষ করে মোবাইল ফোন মেকানিক, ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশন রিপেয়ারসহ বিভিন্ন কারিগরি খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ প্রবাসেও আলোড়ন তুলেছে।

এই উদ্যোগে মুগ্ধ হয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি, বনি আমিন, তাঁর আন্তরিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আগে থেকে আহমাদুল্লাহকে খুব একটা না চিনলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর কর্মকাণ্ড বনি আমিনকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি মনে করেন, জ্ঞান ও উদারতায় আহমাদুল্লাহ অনেক বড় উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।

বনি আমিন বলেন—
“আজ বিদেশের প্রতিটি দেশ আমাদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। কারণ, যারা বিদেশে যায় তাদের প্রায় ৯৮% অদক্ষ। সারা পৃথিবীতে মোবাইল, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশন মেকানিকদের যে চাহিদা, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আহমাদুল্লাহ সাহেব যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা যুগান্তকারী। যদি সরকারও এ খাতকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে, তবে জনসংখ্যা আমাদের শক্তিতে রূপান্তরিত হবে।”
তিনি আরও জানান, তাঁর দৃষ্টিতে একজন আলেম বা ইসলামি বক্তার দায়িত্ব শুধু ওয়াজ-নসিহত নয়, বরং আধুনিক সমাজ গঠনে অবদান রাখা। আহমাদুল্লাহ সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আর সেই অনুপ্রেরণাতেই বনি আমিন ঘোষণা দিয়েছেন একটি বিশেষ অঙ্গীকার—
“আহমাদুল্লাহ হুজুরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যারা দক্ষতা অর্জন করবে এবং অন্তত দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকবে, তাদের মধ্যে থেকে প্রতি বছরে অন্তত দুজনকে পশ্চিমা বিশ্বের যেকোন দেশে পাঠানোর দায়িত্ব আমি নেবো ইনশাআল্লাহ।”
প্রবাস থেকে এই অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশি তরুণ সমাজের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কারণ, বিদেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশের বড় অংশ এখনো অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে গিয়ে কম বেতনে কাজ করছে।
বনি আমিন তাঁর বক্তব্যে চীনের একটি উদাহরণও টেনে আনেন। তিনি বলেন, একসময় উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষ সময় কাটাতেন আড্ডা বা ক্ষুদ্র আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে। কিন্তু সঠিক নীতিমালার কারণে আজ তারা আধুনিক দক্ষতায় এগিয়ে গেছে, যা আমাদের দেশকেও শিক্ষা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বনি আমিনের প্রতিশ্রুতি এবং আহমাদুল্লাহর উদ্যোগ একত্রিত হলে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সামনে খুলে যেতে পারে নতুন এক দিগন্ত। শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, সমাজ ও অর্থনীতির বাস্তবতায়ও একজন আলেম কীভাবে পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারেন, তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন শায়েখ আহমাদুল্লাহ। আর প্রবাসী বনি আমিন তাঁর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সেই প্রচেষ্টাকে আরও বিস্তৃত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর। আহমাদুল্লাহর উদ্যোগ এবং বনি আমিনের অঙ্গীকার প্রমাণ করছে—ধর্ম, শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও প্রবাসী সহায়তা একত্রিত হলে বাংলাদেশও বদলে যেতে পারে দক্ষতা ও সম্ভাবনার নতুন এক অধ্যায়ে।
নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *