এক মুহূর্তের অসতর্কতায় গাড়ি দুর্ঘটনা: নিরাপদ পথের মাঝেও আসে অনাকাঙ্ক্ষিত ধাক্কা

শিল্প ও সাহিত্য

অনলাইন ডেস্ক: আসসালামু আলাইকুম। আজকের দিনটি শুরু হয়েছিল অন্য সব সাধারণ দিনের মতোই—স্নিগ্ধ সকালের আলোয় পরিবারকে নিয়ে ধানমন্ডি যাওয়ার আনন্দ নিয়ে। পথচলা ছিল সাবলীল ও মসৃণ। ঢাকা শহরের জ্যাম-জট পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো গেল নির্বিঘ্নে।

​কিন্তু জীবনের নাটকীয়তা বুঝি লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে। সকালে নিরাপদে পথ চলে আসার পর, বিপদটা যেন অপেক্ষায় ছিল একেবারে বাসার দোরগোড়ায়। বাড়ির গলিতে প্রবেশ করতে গিয়েই ঘটল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

​একজন প্রতিবেশী তাঁর প্রাইভেট কার রাস্তার মুখে পার্কিং করে ওয়াশ করছিলেন, আর তাঁর বন্ধুও আরেকটি গাড়ি পাশে দাঁড় করিয়ে কথা বলছিলেন। এটাই হলো বিপদের মূল কারণ—রাস্তার মুখে অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং। নিজের বাড়ি বলে হয়তো কিছুটা দ্রুততা কাজ করছিল, অথবা রাস্তা পরিষ্কার দেখে দ্রুত পার হয়ে যাওয়ার অসাবধানতা। দাঁড়িয়ে থাকা সেই গাড়িটিকে সাবধানে অতিক্রম করার সময়, আমার গাড়ির ডানপাশের দরজার সাথে তার পেছনের বাম্পারের ঘষা লেগে গেল।

​আমার সযত্নে চালিত গাড়ির ডান পাশের দরজা থেকে চাকা পর্যন্ত হয়ে গেল ভয়ংকর ডেন্ট। যে কোনো চালকের জন্যই এই দৃশ্য মর্মস্পর্শী। সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় এই ভেবে যে, ঢাকা শহরের জটিল ট্র্যাফিক সফলভাবে পার করেও এমন তুচ্ছ কারণে এই ক্ষতি হলো।

​স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে চলতে থাকে দ্বিধা ও অপরাধবোধের তীব্র সংঘাত। আমি নিজেকে দোষী মনে করছি, আবার মনে হচ্ছে হয়তো দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটি একটু সরে গিয়েছিল আমাকে সাইড দিতে। কিন্তু অন্যপক্ষ যখন দৃঢ়ভাবে বলে যে সে নড়েনি, তখন সেই নিরাপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটির দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ সংযত করা ছাড়া উপায় থাকে না।

​ঘটনাস্থলে বাড়ির সভাপতিকে বললাম, তিনি আনুষঙ্গিক কোনো তৎপরতা দেখালেন না—আর যার সাথে এই ঘটনা সে ছিল আমার একজন ফলোয়ার। আমি রাগকে সংযম করে ধরে রাখার চেষ্টা করলাম, কারণ জানতাম রাগ করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে মাথা ঠান্ডা করার জন্য বসে থাকলাম, তারপর গাড়িটি চালিয়ে পার্কিংয়ে রেখে দিলাম।

গাড়ির আঘাতের চেয়েও বেশি কষ্ট লেগেছিল তখন, যখন ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি বিষয়টি জানার পরও একটুও সান্ত্বনার কথা বললেন না। মানুষ বিপদের সময় সামান্য সহানুভূতির প্রত্যাশা করে—কিন্তু সেই মুহূর্তে তার নীরবতা আমার মনকে আরও ভারী করে তুললো। যাই হোক, জীবনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা মানুষের স্মৃতিতে গভীর দাগ কাটে। এ অভিজ্ঞতা হয়তো সারাজীবন মনে থাকবেনা তবে ভবিষ্যতে চলার পথে আমাকে আরও বিচক্ষণ, ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিমান হতে সাহায্য করবে।

তারপর দুপুর বেলা খাওয়া-দাওয়া শেষে পরিচিত বড় ভাই ডেন্ট পেইন্ট গ্যারেজ মালিক​ সামসু ভাইকে ফোন দিলে জানতে পারি উনি নেপাল গেছে কিন্তু তার গ্যারেজে ম্যানেজার হাসান ভাই গাড়ি নিয়ে আসতে বলে।

বিকেলে গাড়িটা নিয়ে চাঁদউদ্যান শামসু ভাইয়ের গ্যারেজে নিয়ে গেলে জানানো হলো—এই কাজ শেষ করতে হলে ন্যূনতম তিন দিন লাগবে। প্রথম দিনই গাড়ির ডেন্ট তুলে ফিনিশিং ও পুটিং দেওয়ার কাজ শুরু হলো; একেবারে তাৎক্ষণিক সমাধান নেই—ডেন্ট সরানো, রং করা, রেফ করে ঠিক করা—সবই ধৈর্যশীল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। গ্যারেজের কাজ দেখলে বোঝা যায়, ক্ষতিকর অবস্থান থেকে গাড়ি বের করা ও মেরামত করানো কতটা কষ্টসাধ্য।

​আমি নিজে সবসময় ‘সেভ ড্রাইভ’ করার চেষ্টা করি—পিছন থেকে কেউ থাকলে তাদেরকে সাইড দিয়ে দিই, অলিগলিতে অল্প গতি রাখি; অনেক সময় এজন্য রিকশাওয়ালাদের কটু বকুনি শুনতে হয়, তবুও নিরাপদ হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই ঘটনা সেই সতর্কতার মাঝেই এল—বহু চেষ্টা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত দুর্ঘটনা হলো।

​মনের জোরে, নিজেকে হার না মানতে বললাম—সবাই ভালো থাকুক, দোয়া করবেন, এবং নিরাপদে চলুন। আমি চাই নিরাপদ সড়ক—নিরাপদ জীবন। আল্লাহ হাফেজ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *