নিয়মিত মোটরবাইক চালাতে গিয়ে শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি, সতর্কতার পরামর্শ

স্বাস্থ্য

ভোরের দূত ডেস্ক: সহজ চলাচল, কম খরচে ভ্রমণ এবং সময় বাঁচানোর জন্য দেশের শহর ও গ্রামে মোটরসাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। তবে দীর্ঘ সময় বাইক চালানোর সময় সঠিক দেহভঙ্গি না রাখা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। প্রথম দিকে ছোটখাটো অস্বস্তি হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে।

মোটরবাইক চালানোর সময় সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো পিঠের ব্যথা। হ্যান্ডেল ধরার সময় সামনের দিকে ঝুঁকলে বা সিটের উচ্চতা ঠিক না হলে মেরুদণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এছাড়া ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা দেখা দিতে পারে। হেলমেটের ভার, কুঁজো ভঙ্গি বা সিট-হ্যান্ডেলের অসামঞ্জস্য ঘাড় ও কাঁধে টান সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময় এমন ভঙ্গিতে থাকলে সার্ভিকাল স্পনডিলোসিস বা রোটেটর কাফ ইনজুরি হতে পারে।

কোমরে ব্যথাও একটি সাধারণ সমস্যা। দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে বসে থাকলে কোমরের পেশি শক্ত হয়ে যায়, যা প্রলাপসড লাম্বার ডিস্ক বা পিএলআইডি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া হাত ও কবজির ব্যথা দেখা দিতে পারে। হ্যান্ডেল ধরে রাখলে বা থ্রটল ব্যবহার করলে কবজি ও আঙুলে চাপ পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে টেনিস এলবো বা কারপাল টানেল সিনড্রোমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হাঁটু ও নিতম্বে চাপও একটি সমস্যা। সিট ও ফুটরেস্টের দূরত্ব শরীরের উচ্চতার সঙ্গে মানানসই না হলে হাঁটু ও নিতম্বে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘ সময় চালানোর ফলে সার্বিক ক্লান্তি, অস্বস্তি এবং ঝিমুনি অনুভূত হতে পারে।

শারীরিক জটিলতা এড়াতে সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা জরুরি। পিঠ সোজা রাখা, কাঁধ রিলাক্স রাখা এবং মাথা সোজা রাখা উচিত। বাইকের সিট এমন উচ্চতায় রাখুন যাতে পা স্বাভাবিকভাবে মাটিতে পৌঁছায়। হ্যান্ডেল ও ফুটরেস্ট শরীরের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

একটানা ৩০–৪০ মিনিটের বেশি চালানো উচিত নয়। মাঝে মাঝে থেমে হালকা স্ট্রেচিং করা জরুরি। এছাড়া মানসম্মত হেলমেট, গ্লাভস ও সেফটি জুতো ব্যবহার করলে চাপ কমে।

প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্রাম, গরম বা ঠান্ডা সেঁক এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি করা যেতে পারে, যেমন শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, ইন্টারফেনশিয়াল থেরাপি এবং নর্ব স্টিমুলেশন।

দৈনন্দিন অভ্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত হালকা স্ট্রেচিং, কোর ও পিঠের পেশি শক্ত করার ব্যায়াম এবং ভারী ব্যাগ পিঠে না নিয়ে বাইকের সামনের অংশে রাখা। ঘুমের সময় সাপোর্টিভ বালিশ ব্যবহার করা এবং দীর্ঘ সময় চালানোর পর কাজ শুরু করার আগে বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।

নিয়মিত সঠিক দেহভঙ্গি এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে মোটরবাইক চালানোর কারণে হওয়া বেশিরভাগ সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করা সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *