চাপ সামলাতে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিমা গড়ছেন কুড়িগ্রামের নারী শিল্পীরা

ধর্ম সারাদেশ

ভোরের দূত ডেস্ক: ভোরে উঠে রান্না আর সংসারের কাজ সামলিয়েই কুড়িগ্রামের নারীরা হাত লাগাচ্ছেন প্রতিমা গড়ায়। এ বছর দুর্গোৎসবে জেলায় প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে প্রতিমাশিল্পী পুরুষদের পাশাপাশি ঘরের নারী সদস্যরাও নেমেছেন প্রতিমা তৈরির কাজে। তাদের হাতে চলছে প্রতিমার কাঠামো গড়া থেকে শুরু করে রঙ, অলংকার, শাড়ির কাজ সবই।

জেলার বিভিন্ন কুমোরপাড়া ও পালপাড়ায় প্রথমবারের মতো এমন ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। আগে পুরুষরাই এ শিল্পের প্রধান কারিগর ছিলেন। কিন্তু এবার চাপ সামলাতে নারীরাও গৃহস্থালির কাজ ফেলে দাঁড়িয়েছেন কর্মশালায়।

রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার গ্রামের বেবী মালাকর বলেন, ‘এবার গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ প্রতিমার অর্ডার এসেছে। সংসারের কাজ ফেলে স্বামীকে সাহায্য করছি।’

শুধু গৃহবধূ নয়, কিশোরী মেয়েরাও শিখে নিচ্ছে প্রতিমা গড়ার কাজ। বৈদ্যের বাজার গ্রামের শিক্ষার্থী সপ্তমী মালাকর বলেন, ‘বাবা একা এত কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে। গতবার আমরা সাতটা প্রতিমা বানালেও এবার অর্ডার এসেছে পনেরোটা। তাই আমিও মাটি গড়তে, কাঠামো বাঁধতে শিখছি। বাবাকে সাহায্য করছি।’

অন্যদিকে বংশ পরম্পরায় প্রতিমা শিল্পী কালিকান্ত পাল বললেন, ‘সারা বছর আমরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করে সংসার চালাই। দুর্গাপূজার সময়ই আসে বড় অর্ডার, তখনই একটু স্বস্তি মেলে। গতবার আটটা প্রতিমা বানিয়েছি, এবার অর্ডার এসেছে চৌদ্দটার। একা হাতে সম্ভব নয়, তাই ঘরের মেয়ে-বউরা কাজে লেগে পড়েছে। তাদের সাহায্য না পেলে এত কাজ শেষ করা যেত না।’

কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ৫১৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসব হবে, যা গত বছরের তুলনায় ৩২টি বেশি। সদর উপজেলায় ৫৫টি, রাজারহাটে ১৩১টি, উলিপুরে ১২৫টি ও ফুলবাড়ীতে ৬৫টি মণ্ডপে পূজা হবে। পূজার সংখ্যা বাড়ায় প্রতিমার চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রতিমা চৌধুরী  জানান, পুরুষরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই নারীরা সংসারের কাজ শুরু করেন। কিন্তু সমাজে তাঁদের শ্রমের মূল্যায়ন হয় না, কারণ এসব কাজ সরাসরি অর্থ উপার্জনের সঙ্গে যুক্ত নয়। এবারের প্রতিমা শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ সরাসরি আয়-রোজগারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিষয়টিকে মহিলা পরিষদ ইতিবাচকভাবে দেখছে। তিনি বলেন, নারী–পুরুষের হাত ধরে এবারের প্রতিমা যেন নতুন রূপ পাক। নারীরা ন্যায্য মজুরি ও সম্মান পাক- এই প্রত্যাশা করি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *