খাদ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি: জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন বিপদ

স্বাস্থ্য

ভোরের দূত ডেস্ক: স্থায়ীভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করছি, তা এখন মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মাছ, সবজি, ফল, দুধ, ব্রয়লার মুরগি এবং টি-ব্যাগে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ক্ষতিকর ভারী ধাতু রয়েছে। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এসব খাদ্যদূষণ ক্যানসার, কিডনি, হৃদরোগ ও প্রজনন সমস্যা বাড়াচ্ছে। তবে সরকারি উদ্যোগ এখনও সীমিত ও খণ্ডিত রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালের গবেষণায় দেখা যায়, দেশি প্রজাতির ১৫টি মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, এই মাছগুলোতে হাই ডেনসিটি পলিথিলিন, পলিপ্রোপাইলিন-পলিথিলিন কপোলাইমার ও ইথিলিন ভিনাইল এসিটেটের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এতে রুই, তেলাপিয়া, কই, কালিবাউশ, বেলে, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, শিং, টাটকিনি, বাইন, বাটা, মেনি ও বাছা মাছের নাম অন্তর্ভুক্ত।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) শাকসবজি ও ফলের নমুনা পরীক্ষা করে। ফলাফল অনুযায়ী, আলু, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, টমেটো, লালশাক, পটোল, বাঁধাকপি, শসা ও মোটরশুঁটিতে লেড, ক্রমিয়াম ও কাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আম, লিচু, বরই ও পেয়ারার ৩২০টি নমুনার মধ্যে ৩৯টিতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইলিশ মাছ পরীক্ষা করে নদীমুখ থেকে ধরা ইলিশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পাশাপাশি ক্যাডমিয়াম, সিসা, পারদ ও আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।

২০২৩ সালের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড়ে অতিরিক্ত মাত্রায় নিকেল, ক্রোমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক রয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি নিম্নমানের খাদ্য খাওয়ানো উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের গবেষকরা বাজারে পাওয়া বিভিন্ন পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে দেখেছেন, তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। অপাস্তুরিত দুধের নমুনায় ফরমালিন ও ডিটারজেন্টও পাওয়া গেছে।

টি-ব্যাগের প্যাকেজিং পরীক্ষা করে এনভায়রনমেন্ট ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) বিপজ্জনক মাত্রায় ভারী ধাতু শনাক্ত করেছে। এতে ক্রোমিয়াম, সিসা, পারদ ও আর্সেনিকের মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে।

বিএফএসএ এই গবেষণাগুলোকে প্রাথমিক হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং আরও বড় পরিসরে গবেষণা করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব উদ্যোগ এখনও সীমিত ও অকার্যকর।

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল জানান, খাদ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক। ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস এবং শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া এর সম্ভাব্য প্রভাব। তিনি সতর্ক করেছেন, এই ক্ষতিকর উপাদানগুলোর প্রভাব অনেক পরে দেখা দেয়। তাই এখনই সরকারি উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ডা. আবু জামিল আরও বলেন, উৎস চিহ্নিত করে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, উৎপাদনকারীদের সচেতন করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, প্রাথমিক গবেষণা থেকেই সমস্যার আলামত পাওয়া গেছে। আরও বড় পরিসরে কাজ চলবে এবং দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পরিবেশ, খাদ্য, প্রাণী ও কৃষি মন্ত্রণালয়ও সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শুরুতেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। গবেষণার ভিত্তিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ডা. আসিফ মাহমুদ ও অধ্যাপক মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদারও জানান, খাদ্যদূষণ প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণাল

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *