‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে’: জাতিসংঘে ড. ইউনূসের জোরালো দাবি

জাতীয়

ভোরের দূত ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় অবিলম্বে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হওয়া তাঁর ভাষণে তিনি পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।

ড. ইউনূস গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শিশুরা না খেয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করছে, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, হাসপাতাল, স্কুলসহ একটি গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন:

চরম জাতীয়তাবাদ, অন্যের ক্ষতি হয় এমন ভূরাজনীতি, এবং অন্যের দুর্ভোগের প্রতি ঔদাসীন্য বহু দশকের অগ্রগতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

তিনি জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনেই একটি নির্বিচার গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে।’

মানবজাতির পক্ষ থেকে এর অবসানে সর্বোচ্চ চেষ্টা না করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের পক্ষ থেকে ড. ইউনূস জোরালোভাবে বলেন, ‘শুধুমাত্র ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমারেখার ভিত্তিতে, যেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে, তখনই ন্যায়বিচার সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যেখানে সহনশীলতা, অহিংসা, সংলাপ ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি জানান, গত সাড়ে তিন দশক ধরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে কাজ করছে।

বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এ পর্যন্ত ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন।

ড. ইউনূস জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানের জন্য স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত ম্যান্ডেট এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান।

ভাষণের শেষভাগে তিনি বহুভাষিকতাকে উৎসাহিত করার কথা বলেন এবং ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ, বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ বা ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

তিনি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্যকে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেন।

গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়ানো হয়েছে, যা এখনও চলমান।

এছাড়াও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ‘ডিপফেক’-এর প্রসার পরিস্থিতিকে জটিল করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি এই বিকৃত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *