“জেগে উঠেছে ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি: ব্যারেন আইল্যান্ডে লাভা ও ধোঁয়ার প্রলয়”

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্যারেন আইল্যান্ডে দেশের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি পুনরায় সক্রিয় হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপটি জনবসতিহীন হলেও, এর ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যারেন দ্বীপ মূলত আগ্নেয় উপাদান দ্বারা গঠিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৪ মিটার উচ্চ। দ্বীপটির নিকটতম জনবসতিপূর্ণ স্থান হলো হ্যাভলক দ্বীপ। যদিও মানুষ এখানে বসবাস করে না, দ্বীপটিতে বন্যপ্রাণী, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বাদুড়, ইঁদুর ও ছাগল দেখা যায়।

ইতিহাস অনুযায়ী ব্যারেন দ্বীপে প্রথম অগ্ন্যুৎপাত রেকর্ড করা হয় ১৭৮৯ সালে। পরবর্তী বড় অগ্ন্যুৎপাতটি ১৯৯১ সালে ঘটে এবং দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আবার আগ্নেয়গিরিটি সক্রিয় হয়েছিল। এবারও সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ ও ২০ তারিখে দুটি ধাপে স্ট্রম্বোলিয়ান ধরনের অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তপ্ত লাল লাভা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে এবং শীর্ষ থেকে ঘন ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই বিস্ফোরণ আন্দামানে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করেছে, তবে আশেপাশের এলাকায় কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং পোর্ট ব্লেয়ারসহ অন্যান্য দ্বীপের জন্য কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি।

ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ব্যারেন দ্বীপ একটি ক্লাসিক subduction zone-এ অবস্থিত। এখানে ভারতীয় প্লেট বার্মা প্লেটের নিচে প্রবেশ করছে, যার ফলে সৃষ্ট চাপে ম্যাগমা উপরে উঠে আসে এবং আগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এই প্রক্রিয়ার কারণে দ্বীপটির ভূমি ও পরিবেশ এখনও ভূতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ অনুমতি নিয়ে বন দপ্তরের বিজ্ঞানীরা দূর থেকে দ্বীপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, তবে সাধারণ জনসাধারণের জন্য দ্বীপে নামার অনুমতি নেই।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, যদিও এই অগ্ন্যুৎপাত বর্তমানে সরাসরি ক্ষতিকর নয়, তবুও এর ছাই ও গ্যাস কাছাকাছি সামুদ্রিক প্রাণী এবং প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া, ঘন ধোঁয়া ও লাভা নির্গমনের কারণে বিমান চলাচলেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই কারণে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভূতাত্ত্বিক দপ্তর অব্যাহতভাবে দ্বীপটির পরিস্থিতি নজরদারি করছে। জনবসতিহীন এই দ্বীপটি যদিও মানুষের জন্য অনাবাসযোগ্য, তবুও এটি ভারতের ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *