ট্রাম্প প্রশাসনের ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পরিকল্পনা ঘিরে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আর্জেন্টিনার অর্থনীতি টলমল অবস্থায়, আর সেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এই সপ্তাহে জানান, আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। তবে দেশের ভেতরে কৃষক, রাজনৈতিক মহল ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

আর্জেন্টিনার পুরনো সংকট

দীর্ঘ দশক ধরে ঋণ খেলাপি ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে আর্জেন্টিনা একাধিকবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) সহায়তা নিয়েছে। বর্তমানে দেশটির মুদ্রা ‘পেসো’ তীব্র অবমূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয়ের পর রাজনৈতিক চাপও বেড়েছে প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলির ওপর। এই অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা পরিকল্পনাকে অনেকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবে দেখছেন।

সমালোচনায় মার্কিন রাজনীতিবিদরা

মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এক চিঠিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন—
“আমেরিকানরা যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা, ভাড়া, চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন অন্য দেশের মুদ্রার মান বাড়াতে আমাদের জরুরি তহবিল ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য।”

অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, আর্জেন্টিনার অতীত ইতিহাস বিবেচনায় এই সহায়তা ঝুঁকিপূর্ণ। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসওয়ার প্রসাদ মনে করেন, “এটি অর্থনৈতিকভাবে কোনোভাবেই টেকসই সমাধান নয়। মার্কিন করদাতাদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।”

কৃষকদের ক্ষোভ

মার্কিন কৃষকরাও এই উদ্যোগে ক্ষুব্ধ। চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানি আগেই ধাক্কা খেয়েছে। এখন আর্জেন্টিনা রপ্তানি কর কমিয়ে চীনে সয়াবিন বিক্রি বাড়াচ্ছে। এতে মার্কিন কৃষকেরা আরও সংকটে পড়ছেন।
ক্যালেব রাগল্যান্ড, আমেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বলেন—
“আমরা চীনে রপ্তানির সুযোগ হারাচ্ছি, আর সরকার বিপুল অঙ্কের টাকা দিচ্ছে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে। এটা অন্যায্য।”

তুলনা মেক্সিকো সংকটের সঙ্গে

অর্থনীতিবিদ ব্র্যাড সেটসার মনে করেন, ১৯৯৫ সালে বিল ক্লিনটনের সময় মেক্সিকোকে দেওয়া ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার সঙ্গে আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি এক নয়। মেক্সিকো প্রতিশ্রুত তেল রপ্তানি বন্ধক রেখে ঋণ শোধ করেছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার ঋণ খেলাপির ইতিহাসে ঝুঁকি অনেক বেশি।

কূটনৈতিক ইঙ্গিত

ট্রাম্প প্রকাশ্যে মাইলিকে নিজের “প্রিয় প্রেসিডেন্ট” বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সহায়তা আর্জেন্টিনার অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মাইলিকে বাঁচানোর কৌশল। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে।

আর্জেন্টিনাকে ঘিরে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সহায়তা পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে। অর্থনীতিবিদরা একে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন, কৃষকেরা অন্যায্য মনে করছেন, আর বিরোধীরা একে ‘রাজনৈতিক আমলাতন্ত্র’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *