ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা ডাকসুর

ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের অবমাননাকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নানাবিধ কটূক্তি করা হয়।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ‘‘বিক্রি হয়ে যাওয়া মস্তিষ্ক’’, ‘‘ট্রেন্ডে গা ভাসানো’’, ‘‘দাসী’’ ও ‘‘পশ্চাদপদ’’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হাটহাজারী মাদরাসার সঙ্গে তুলনা করে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান যে মন্তব্য করেছেন, তা শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়; বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমাজের প্রতি চরম বিদ্বেষ ও সামাজিক বিভাজনের বর্ণবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

ডাকসুর মতে, চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘৃণিত মন্তব্য জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য মারাত্মকভাবে হতাশাজনক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তচিন্তার চর্চার কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করে আসছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে একটি মাল্টি-কালচারাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে শতবর্ষ পূর্ণ করেছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন বর্ণবাদী ও অবমাননাকর বক্তব্য শুধু শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে আঘাত করে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকেও অসম্মান করে। দেশ গঠনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অপরিসীম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে আজ হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ডাকসু স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, অবমাননাকর এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে তার এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন ও নিন্দনীয় মন্তব্যের জন্য অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিভেদমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার প্রতীক। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হেয় করে কথা বলেন, তারা আসলে দেশের উন্নত, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনার বিরোধিতা করেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই—শিক্ষার্থীদের মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে ডাকসু কখনো আপস করবে না।”

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ডাকসু সবসময় সচেতন এবং ভবিষ্যতেও যেকোনো বর্ণবাদী ও অবমাননাকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অপমানিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা কেবল শিক্ষার্থীদের নয়, বরং পুরো জাতির প্রতি অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা প্রগতির আলোকবর্তিকা হয়ে থেকেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বা অপমানজনক মন্তব্য গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে। তাই এমন মন্তব্য রাজনৈতিক পরিসরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সর্বোপরি, ডাকসু জানিয়েছে যে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষার্থীদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যে কোনো অপমানজনক বক্তব্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষায় ডাকসু সর্বদা সোচ্চার থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *