নাজমুল হুদা, চরফ্যাশন উপজেলা:
নাজমুল হুদা জাপানে দীর্ঘায়ু যেন স্বাভাবিক ঘটনা। ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান এবং বর্তমানে এক লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত শতবর্ষী বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৯৯,৭৬৩। এটি গত বছরের তুলনায় সাড়ে চার হাজার বেশি।
বিশ্বব্যাপী শতায়ু মানুষের সংখ্যার ক্ষেত্রে জাপান পুনরায় শীর্ষে। যদিও কিছু গবেষক এই পরিসংখ্যান নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন, তবুও সাধারণভাবে জাপান অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক হলেন ১১৪ বছরের শিগেকো কাগাওয়া। কিয়োটোর কাছে নারা অঞ্চলে বসবাসকারী তিনি পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। ৮০ বছর বয়সেও গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে এবং হাতে ডাক্তারের ব্যাগ নিয়ে রোগীদের বাড়ি বাড়ি যেতেন। ১১৪ বছর বয়সেও তিনি দৈনন্দিন প্রায় সব কাজ নিজেই করতে সক্ষম, দৃষ্টিশক্তিও প্রখর এবং কোনো বড় ধরনের রোগ নেই। সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ নাগরিক কিয়োতাকা মিজুনো, যিনি শিগেকোর থেকে তিন বছরের ছোট।
জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা ১৯৬০-এর দশকে তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তখন জি-৭ দেশের মধ্যে জাপান তালিকার তলদেশে ছিল। ১৯৬৩ সালে সরকার প্রথমবারের মতো শতবর্ষী বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের জরিপ শুরু করে। ওই বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শতবর্ষী নাগরিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৩। ১৯৮১ সালে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজারে পৌঁছায়, ১৯৯৮ সালে ১০ হাজার এবং বর্তমানে প্রায় এক লাখ।
গবেষকরা বলছেন, জাপানের দীর্ঘায়ুর রহস্যের পেছনে রয়েছে কম হৃদরোগ ও ক্যানসারে মৃত্যুর হার, কম স্থূলতা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সক্রিয় জীবনধারা। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে স্থূলতার হার কম দেখা যায়। জাপানিরা বেশি হাঁটাচলা করেন, ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে গণপরিবহণ ব্যবহার করেন এবং খাদ্য তালিকায় চিনি ও লবণ খুব কম রাখেন।
এই সমস্ত কারণে জাপানের মানুষদের জীবনকাল অন্য দেশের তুলনায় অনেক দীর্ঘ। জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা অন্য দেশের জন্যও উৎসাহ এবং গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।