অনলাইন ডেস্ক: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গত দুই মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ, ডিম, সবজি এবং মাছের দাম সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং অনেকেই টিকে থাকার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ও সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র ৪ সেপ্টেম্বর ও ৩ জুলাইয়ের বাজারদরের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চিত্র। দুই মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৩-৩৬ শতাংশ বেড়ে ৭৫-৮০ টাকা হয়েছে। ফার্মের ডিমের দাম ডজন প্রতি ১৪০-১৪৫ টাকায় উঠেছে, যা ১৭ শতাংশ বেশি। সোনালি মুরগির দাম ৭ শতাংশ বেড়ে ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১৪ শতাংশ বেড়ে ১৬০ টাকা এবং রুই মাছ ১২-১৪ শতাংশ বেড়ে ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বেগুন ৩৩-৬০ শতাংশ বেড়ে ১০০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা টমেটোর দাম ৬০-৮৭ শতাংশ বেড়ে এখন ১৫০-১৬০ টাকা। করলা ও বরবটি যথাক্রমে ২৯-৩৩ শতাংশ ও ৪৩-৫০ শতাংশ বেড়ে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপে ও আলু যথাক্রমে ৩৫-৪০ ও ২৫-৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, বাজার তদারকির অভাব, সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্য। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে মধ্যস্বত্বভোগীরা কয়েক গুণ বেশি দামে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করছে।
ক্রেতা ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারের ক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, “বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই, যার কারণে এই টালমাটাল অবস্থা চলছে। সীমিত আয়ের মানুষকে এখন প্রতি মাসে ঋণ করতে হচ্ছে।” তিনি সরকারের প্রতি বাজার তদারকি জোরদারের আহ্বান জানান।
জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রবিউল ইসলাম জানান, টানা বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি করেছে।
ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, “বর্তমানে ভোক্তারা সবজির বাজারে বড় অসহায় হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো যখন বাজার অস্থির হয়, তখন তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেগুলো নেওয়া হয় না।” তিনি বলেন, সরবরাহ শৃঙ্খলে ‘ভ্যালু অ্যাডিশন’-এর নামে পণ্যের দাম বাড়ে, যা নৈতিক, অনৈতিক, নিয়মমাফিক বা নিয়মবহির্ভূত হতে পারে।
খলিলুর রহমান সজল মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যদি নিয়মিত বাজারে হস্তক্ষেপ করত, তাহলে ভোক্তারা এর সুফল পেত। চালের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দামও সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাদের একটি বড় ব্যর্থতা। তিনি বলেন, ভোক্তাদের এই অসহায়ত্ব থেকে রক্ষা করতে বাজারে নিয়মিত এবং স্থায়ী হস্তক্ষেপ জরুরি।