মাসুম পারভেজ: ভালোবাসা মানুষকে শক্তি দেয়, বাঁচার প্রেরণা দেয়। অথচ সেই ভালোবাসাই কখনো কখনো মানুষের জীবনে হয়ে ওঠে গভীর যন্ত্রণার কারণ। সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও বেকারত্ব মিলিয়ে এক সময় প্রেমিক-প্রেমিকারা হয়ে যায় মানসিকভাবে ক্লান্ত। কারো চোখ ভিজে ওঠে অঝোরে কান্নায়, কেউ আবার আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্তেও পৌঁছে যায়। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা কিংবা অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া—এসব খবর এখন আর অচেনা নয়। কেউ বেঁচে গেলেও থেকে যায় আজীবনের ক্ষত; তারা যেন হয়ে ওঠে “জীবন্ত লাশ”।
বেকার জীবনের ভালোবাসা সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি করে মানুষকে। স্মৃতি আর হতাশার দোলাচলে প্রতিনিয়ত ডুবে থাকে তারা। আমাদের সমাজে আজও প্রশ্ন তোলা হয় না—ভালোবাসার এই ভয়াবহ পরিণতি কেন হয়? কিংবা ভবিষ্যৎ এ এত বড় ক্ষত কিভাবে এড়িয়ে চলা যায়? আমরা চাই না বলেই কি ভাবি না? নাকি আমরা এতটাই আবেগপ্রবণ যে বারবার প্রতিশ্রুতি দিই—“কখনও একে অপরকে ছেড়ে যাব না”, অথচ বাস্তবতায় সেই হাত দু’দিকে ছুটে যায়?
ভালোবাসা এক অদ্ভুত অধ্যায়। এখানে সুখের চেয়ে যন্ত্রণার ভাগ বেশি, তবু আমরা ভালোবাসি। বেকারত্ব এই যন্ত্রণাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আজ যে মানুষটি কাজহীন, কাল সে হয়তো উঠে দাঁড়াবে, কিন্তু তার পাশে যদি প্রিয়জনের সমর্থন না থাকে—তবে এই যাত্রা কঠিন হয়ে যায়।
সমাজে ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন আরও দৃঢ় বন্ধন, আরও বেশি ধৈর্য। বিশেষত বেকার জীবনে সঙ্গীর প্রতি আস্থা ও সাহস জোগানো অত্যন্ত জরুরি। কারণ বেকারত্ব হয়তো সাময়িক, কিন্তু সম্পর্কের বিশ্বাস ও সম্মান হারিয়ে গেলে সেটি আর ফিরিয়ে আনা যায় না।
মূল কথা, বেকার জীবনে ভালোবাসা অভিশাপ মনে হলেও, বেকারত্ব ছাড়া ভালোবাসাও কখনো পূর্ণতা পায় না। তাই প্রয়োজন একে অপরের প্রতি সমর্থন, ধৈর্য ও বোঝাপড়া। তবেই হয়তো একদিন আমরা বলতে পারব—“আমাদের গল্প দীপ্তিমান হয়েছে ভবিষ্যতের দিকে।”