ঢাকার বাজারে শাক-সবজির দাম বেড়েছে, ইলিশ এখনও চড়া, মাংস-ডিমের দাম স্থিতিশীল

অর্থনীতি

ভোরের দূত ডেস্ক:

ঢাকার বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও শাক-সবজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ইলিশের দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমলেও তা এখনও বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মুরগি ও অন্যান্য মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা উত্তর সিটির কারওয়ান বাজারে গিয়ে এমন পরিস্থিতি চোখে পড়েছে।

গেল কয়েক মাস ধরে বৃষ্টি ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে ঢাকার সবজির বাজার অস্থির ছিল। মাঝেমধ্যেই দাম ওঠানামা করলেও চলতি সপ্তাহে শাক-সবজির দাম ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। বেসরকারি চাকরিজীবী শফিক বলেন, “সবজির দাম আবারও লাগামছাড়া হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে।”

বাজারে সরবরাহকারীরা জানান, সাম্প্রতিক কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এতে কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতি বছরের এই সময় সবজির দাম কিছুটা চড়া থাকে। কারণ, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজির শেষ পর্যায়ে থাকে এবং শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে।

মানভেদে বাজারে প্রতি কেজি ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, ঝিঙে ৬০-৮০ টাকা, কহি ৫০-৬০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, আমড়া ৬০ টাকা, কচুর মুখি ৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা ও কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৬০-৭০ টাকা এবং চালকুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৬০ টাকা।

মুরগি ও অন্যান্য মাংসের বাজারে দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, লাল লেয়ার ২৮০ টাকা। সাদা কক প্রতি কেজি ২৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত; গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১,২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১,১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দামও স্থিতিশীল। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা, সাদা ডিম ১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০-২৩৫ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশের দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে। বর্তমানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২,১০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ১,৭৫০-১,৮৫০ টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রাম ১,৫০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা বশির উদ্দিন বলেন, “ভরা মৌসুমেও রুপালি ইলিশ ২,০০০ টাকার ওপরে কিনতে হচ্ছে। এত দাম হলে একসময় ইলিশ খাওয়া বাদ দিতে হবে।”

অন্যান্য মাছের দাম আগের মতোই চড়া। বোয়াল প্রতি কেজি ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮০০-৮৫০, আইড় ৭০০-৮০০, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০, কাতল ৪৫০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্যাংরা ৭৫০-৮০০, কাঁচকি ৬৫০-৭০০ এবং মলা ৫০০-৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

চালের বাজারে বিশেষ কোনো পরিবর্তন নেই। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৮০-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫-৯২ টাকা এবং মোটা চাল ৫৬-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ী শিমুল খান জানিয়েছেন, “দাম নতুন করে বাড়েনি, তবে কমার সম্ভাবনা নেই।”

সার্বিকভাবে দেখা যায়, ঢাকার বাজারে শাক-সবজির দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ভোক্তারা চাপের মুখে পড়েছেন, তবে মাছ, মাংস ও ডিমের বাজারের দাম স্থিতিশীল থাকায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *